অমিত সরকার, কোচবিহার, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা : শালডাঙা গ্রামের বেশিরভাগ মহিলা আজ ‘আত্মনির্ভরশীল’। তাঁরা এখন প্রমাণ করে দিয়েছেন, বুদ্ধি থাকলে কেউ গৃহবধূ হয়ে আজীবন কাটিয়ে দেয় না। টুকরো টুকরো কাঠ চেরাইয়ের পাতি ছাঁচমতো কেটে সেলাই করে আজ তাঁরা উপার্জনশীল। আর এই নবজাগরণে শামিল হয়েছেন গ্রামের প্রায় বহু মহিলা।
তুফানগঞ্জ ২নং ব্লকের মহিষকুচি ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের শালডাঙা। এখানকার মহিলাদের মিলিত প্রয়াসেই দ্রুত বদলাচ্ছে গোটা গ্রামের অর্থনীতি, বদলাচ্ছে চিন্তাভাবনাও। স্বামীরা দিনরাত ঘাম ঝরিয়ে কেউবা লরিতে, কেউবা মাঠে কাজ করে দিনশেষে যা রোজগার করত তা দিয়ে কোনওমতে চলত তাঁদের সংসার। এহেন অবস্থায় দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের মহিলারা উপার্জনের নয়া দিশার খোঁজ পেল।
গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিই এখন মহিলারা Women of Shaldanga village in Cooch Behar today are ‘self-reliant’
প্রত্যেক মহিলা রোজ ২০০-২৫০ টাকা রোজগার করছে Women of Shaldanga village in Cooch Behar today are ‘self-reliant’
গ্রামের পাশেই রয়েছে কাঠ চেরাই মিল এবং প্লাইবোর্ড তৈরির ফ্যাক্টরি। উপার্জনের জন্য আরেকটা রাস্তা কীভাবে বের করা যায় সেই চিন্তা নিয়ে যমুনা মোদক ও কল্পনা সরকাররা একদিন পৌঁছে গেল কাঠ চেরাই মিলে। দেখতেন, কাঠ চেরাইয়ে পর অনেকটা অবশিষ্ট পাতি পড়ে থাকে। সেই অবশিষ্ট পাতি আবার কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা জানার চেষ্টা করেন যমুনা মোদকরা। জানতে পারেন, টুকরো টুকরো পাতি ছাঁচমতো কেটে সেলাই করে তা প্লাইবোর্ড তৈরিতে কাজে লাগানো সম্ভব। বাইরের মিল থেকে এই কায়দা শিখে এসে একদিন গ্রামের পাশে থাকা কাঠমিলে যান। সেখান থেকে অবশিষ্ট পাতি কিনে এনে বাড়িতেই তা কেটে সেলাই করে নিয়ে যান প্লাইবোর্ড ফ্যাক্টরিতে। সেখানে ভালো দামেই তা বিক্রি করেন তাঁরা। সেদিনের পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কল্পনা মোদক, সবিতা মোদক বা শালডাঙার স্বামীহারা বিধবা মহিলাদেরও। একশোরও বেশি মহিলা সংসার সামলে এখন হয়ে উঠেছেন গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
প্রত্যেক মহিলা রোজ ২০০-২৫০ টাকা রোজগার করছে। বাড়ির কাজ সামলে অনায়াসেই এই কাজ করছে সবাই। কল্পনা, যমুনা, সবিতারা জানালেন, কাঠমিলে বড় গাছের লগ নির্দিষ্ট আকারে কাটার পর প্লাইবোর্ড বানানোর জন্য আবার কাটা হয়। সেখান থেকেও অবশিষ্ট কাঠের পাতি পড়ে থাকে, যেগুলো কোনও কাজে আসে না। সেগুলোই তাঁরা প্রতি কুইন্টাল ৩৫০ টাকা দরে কিনে আনেন। এরপর এক ফুট, দুই ফুট, চার ফুট- এমন বিভিন্ন আকারে ছোট ছোট করে কাটা হয়। সেই ছোট টুকরোগুলো সুতো দিয়ে আবার সেলাই করা হয়। প্লাইবোর্ড ফ্যাক্টরিতে আবার সেগুলো ৮০ পয়সা প্রতি বর্গফুট হিসেবে বিক্রি করা হয়। তাই তো হলফ করে বলাই যায়, শালডাঙা গ্রামের বেশিরভাগ মহিলা আজ ‘আত্মনির্ভরশীল’।
——-
Published by Subhasish Mandal