সঞ্জিত সেন, পূর্ব বর্ধমান, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা : Padma Shri Sujit Chattopadhyay teaches tuition for 2 rupees a year চাকরিতে অবসর হয়ে গিয়েছে। তবে শিক্ষকতা ছাড়তে পারেননি। তাই গোটা অবসর জীবনটা মানুষ তৈরির কাজে ব্যয় করছেন। আর এই কাজ করতে পারিশ্রমিক নেন বছরে মাত্র দু’টাকা। তিনি সুজিত চট্টোপাধ্যায়। এখন বয়স ৭৬। তবে মনের বয়স অনেক কম। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত টিউশন পড়ানোই নেশা সুজিতবাবুর। নিজের একটা নাম দিয়েছেন তিনি— ‘সদাই ফকির’।
আলোকতীর্থে মানুষ গড়ছেন ৭৬-এর সুজিত চট্টোপাধ্যায় Padma Shri Sujit Chattopadhyay teaches tuition for 2 rupees a year
পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের উত্তর রামনগর গ্রামে সেই ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’য় পড়ুয়ার সংখ্যা এই মুহূর্তে তিনশোরও বেশি। ভাবতে অবাক লাগে এই বাজারে টিউশন ফি বছরে দু’টাকা। তাও দিতে হবে পাঠগ্রহণ সম্পূর্ণ হওয়ার পর। সুজিতবাবুর কথায়, ‘গুরু দক্ষিণা। যা না নিলে শিক্ষাদান সম্পূর্ণ হয় না।’ সদাই ফকিরের গুরুকুলের নিয়ম দু’টাকা গুরুদক্ষিণা দিয়ে শিক্ষাগুরুকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবেন পড়ুয়ারা।
মা আলোকলতার নামে পাঠশালার নাম রেখেছেন ‘আলোকতীর্থ’। ৬৫ টাকার মাস মাইনেতে সাত ভাইকে মানুষ করেও অসহায় বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছাশক্তিটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বরাবর সুজিত চট্টোপাধ্যায়। অর্থ নয়, পিছিয়ে পড়া এলাকার পড়ুয়াদের ভালবাসাই পাথেয় সদাই ফকিরের। সেই স্বীকৃতিস্বরূপ ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়ে আপ্লুত মাস্টারমশাই।
‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’য় পড়ুয়ার সংখ্যা তিনশোরও বেশি Padma Shri Sujit Chattopadhyay teaches tuition for 2 rupees a year
পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের উত্তর রামনগরের সুজিতবাবুর পড়াশোনা গ্রামেরই রামনগর জুনিয়র হাইস্কুলে। তারপর বোলপুরের বাঁধগড়া হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। জলপাইগুড়ি থেকে বিটি পাস করেন। ১৯৬৫ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। শিক্ষকতা শুরু হয় রামনগর উচ্চবিদ্যালয়ে। ৪০ বছর চাকরি করেন। ২০০৪ সালে স্কুলের চাকরিতে অবসর নেন।
সুজিতবাবু বলেন, ‘অবসর জীবনকালে হঠাৎ করে জেলার জঙ্গলমহল থেকে ২০০৪ সালে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে পড়তে আসতে চায়। ২০–২২ কিলোমিটার দূর থেকে পড়ুয়ারা এসে জিজ্ঞাসা করে স্যার আমাদের পড়াবেন। যাদের বেশিরভাগই তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের। আমি রাজি হয়ে যাই। তারা জিজ্ঞাসা করে স্যার কত মাইনে নেবেন। আমি বললাম, বছরে ১ টাকা দিতে পারবি। ওরা খুশি হয়ে বলল, সাথে চকলেটও দেব স্যার। সেই শুরু।’
‘লিখে রেখো একফোঁটা দিলেম শিশির’, এটিই আপ্তবাক্য সদাই ফকির সুজিত চট্টোপাধ্যায়ের। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত সারাবছর পড়িয়ে জ্ঞানসমুদ্রের এক কণা শিশিরটুকুই তিনি দিতে পারেন পড়ুয়াদের। শুধু পাঠদান নয়, শিক্ষা দেন স্বভাব, চরিত্র গঠনেরও।
———-
Published by Subhasish Mandal