শুভাশিস মণ্ডল, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা: Memories of Calcutta-London Bus Journey কলকাতা থেকে লন্ডন যাওয়ার জন্য যে বাসটি বহু দেশের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করত সেটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল কেন? একটা সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বেশ কয়েক দিনের এই কলকাতা থেকে লন্ডনের যাত্রাপথ। এই বাস সার্ভিসটি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান হয়ে লন্ডনে ৭০ দিনে যাতায়াত করত। খুবই জনপ্রিয় ছিল এই বাস পরিষেবাটি। কিন্তু কেন বন্ধ হয়ে গেল এই বাসটি? দুই বছর আগে দিল্লি থেকে লন্ডনে বাস চালুর কথা ফের ঘোষণা করা হলেও তা এখনও পর্যন্ত চালু হয়নি।
এই জায়গাটি হেরাতের গিরিপথ। ছবিটি ৪ দশকেরও বেশি পুরনো। এটা ৭০-এর দশকের। হেরাতের গিরিপথটি উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে এমন একটি জায়গা, যেখানে রাস্তায় কাউকে দেখা যায় না। ছবিতে যে বাসটি দেখা যাচ্ছে, সেটি সে সময় ভারত থেকে চলত এবং যাওয়ার পথে কাবুল ও হেরাতে থামত। বাসের কিছু যাত্রীও এইসব স্থানে নামা-ওঠা করতেন। আপনি অবাক হবেন, এমনই বাস পরিষেবা আগে ছিল যা কিনা ভারত থেকে যাত্রা শুরু করে আফগানিস্তানে পৌঁছাত। হ্যাঁ, এটা একেবারেই সত্যি ঘটনা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই বাস পরিষেবাটি ৭০-এর দশকে বন্ধ হয়ে গেলে আর চালু হয়নি।
আমরা যে বাসটির কথা বলছি সেই বাসটি আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে যেতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগত। কিন্তু এই বাস পরিষেবাটি এমনই ছিল যে, ভারত থেকে আফগানিস্তান এবং ইরান পর্যন্ত এর বাস যাতায়াতের জন্য লোকেরা অপেক্ষা করত। যার শেষ গন্তব্যস্থান ছিল লন্ডন। এই বাসটি ৭০-এর দশকে কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্ত চলত। এই বাসটি সিডনির অ্যালবার্ট ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হত। প্রায় ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এই বাস পরিষেবা চালু ছিল। এরপর এটিও বন্ধ হয়ে যায়। যাইহোক, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে এই বাসের রুটটি কতটা আকর্ষণীয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ আফগানিস্তানের মধ্যে দিয়ে একে যাতায়াত করতে হত।
এটাই এই বাস সার্ভিসের টিকিট। যেখানে এই বাসটির সুবিধা, ভাড়া ও রুট উল্লেখ করা হয়েছে। এই বাসের ছাড়ার দিন আগেই ঠিক করা ছিল এবং লন্ডনে পৌঁছানোর দিনও। ভারত থেকে লন্ডন হয়ে অনেক দেশের মধ্যে দিয়ে গেছে বাসটি। পথে অনেক স্টপেজও ছিল। ট্যুর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পথের মধ্যে স্টপেজ দিলেও তখন হোটেলেই যাত্রীদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করত।
এই বাসে প্রচুর যাত্রী যাতায়াত করত। বাস চলাচল শুরু হয় কলকাতা থেকে। এটি নয়াদিল্লি, কাবুল, তেহরান, ইস্তাম্বুল হয়ে লন্ডনে পৌঁছাত। লন্ডন থেকে আবার এই বাস কলকাতায় ফিরত একই রুটে। ৪৫ দিনের এই যাত্রাপথ বেশ মনোরম ছিল। বাসটির এমনভাবে রুটটি তৈরি করা হয়েছিল যা মানুষের বেশ আরামদায়ক এবং স্মরণীয় ছিল। যেমন, যাতায়াতের পথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার মতো বিখ্যাত স্থান থাকলে বাস সেখানে থামিয়ে যাত্রীদের ঘোরাঘুরির সুযোগও করে দিত।
এই বাস সার্ভিসটি ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্ত ১৪৫ পাউন্ড ভাড়া নিত। কিন্তু এর মধ্যে বাসের ভাড়া, খাবার, টিফিন এবং হোটেলে থাকার ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাসটি আলবার্ট বাস নামে বেশি পরিচিত ছিল। কলকাতায় ডাবল ডেকার যে বাস চলাচল করত ঠিক সেরকমই।
এই বাসে শোওয়ার ব্যবস্থা ছিল। যাকে বলে স্লিপিং বার্থ। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যেত। বাসে ছিল একটি সেলুন, বই পড়ার জায়গা এবং বাইরের দৃশ্য দেখার জন্য একটি বিশেষ বারান্দাও। এমন আরামদায়ক যাত্রা আর কোথাও পাবেন না বলেই দাবি করত বাসটি। যাত্রাপথে আপনার মনে হবে আপনি ঘরেই আছেন।
এই বাসের টিকিট পরবর্তী বছরগুলোর জন্য। ততদিনে এর ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৫ ডলার। বাসের টিকিটে আরও লেখা ছিল, ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত বন্ধ থাকলে বিমানে করে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাওয়া হবে। তখন ভাড়া একটু বেশি হবে। ব্যস, এই বাসে মানুষের যাতায়াতও ছিল স্মরণীয়। সম্প্রতি কয়েক মাস আগে ফের একই ধরনের বাস চালুর ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এই দেশগুলোর অবস্থা দীর্ঘ কয়েক বছরে এতটাই বদলে গেছে যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরানের মধ্যে দিয়ে এ ধরনের বাস চালানো যাবে না। যা একটা সময়ে খুব সহজেই হয়ে যেত।
আরও পড়ুন : Snowfall and Rain : বরফের চাদরে ঢেকেছে কুলু, তিন দিন চলবে বৃষ্টি ও তুষারপাত পর্যটকদের সতর্ক করল প্রশাসন