নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে বানপুরের মাটিয়ারিতে ভবানন্দ মজুমদারের বাড়ির কাছেই প্রায় ১০০ বছর ধরে জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagaddhatri Puja) হয়ে আসছে। সেই পুজোই বর্তমানে শাস্ত্রীয় রীতি নীতি মেনে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
গত ছ’বছর ধরে মহিলা পরিচালিত ফুলবাড়ি পোড়া মা তলা সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোতে (Jagaddhatri Puja) মহিলারা সমস্ত কিছু করেন। পুজো কমিটির মহিলারাই ঢাক বাজান। ফল কাটেন। ভোগের জোগাড় করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই মহিলারাই প্রসাদ পৌঁছে দেন। পুজোয় তাসা, ব্যাণ্ডের টিমও মহিলা পরিচালিত নিয়ে আসা হয়।
পুজোর ইতিহাস
সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর জাহাঙ্গির সিংহাসনে আসীন হন। এই সময় আকবরের সেনাপতি মান সিং বারো ভূঁইয়াদের শায়েস্তা করতে নদিয়ার মাটিয়ারি এলাকায় চলে আসেন। এই সময় তাঁকে বিভিন্নভাবে সহায়তায় করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদার। তার জন্য ভবানন্দ মজুমদারকে পুরস্কারস্বরূপ জাহাঙ্গির ডঙ্কা, সিংহাসন সহ বেশ কিছু উপহার সামগ্রী দিয়েছিলেন। ভবানন্দ মজুমদার পরে মাটিয়ারি থেকে কৃষ্ণনগরে চলে আসেন। ভবানন্দ মজুমদারকে নদিয়া রাজের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। নদিয়ারাজের সবথেকে জনপ্রিয় মহারাজা ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র রায়। তবে তাঁর পূর্বসুরী ভবানন্দ মজুমদারের বসতভিটে ছিল এই বানপুর মাটিয়ারিতে। সেখানে আজও অনেক রাজপুত পরিবার রয়েছে। প্রায় ১০০ বছর আগে ভবানন্দ মজুমদারের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagaddhatri Puja) হয় কাঁঠালতলা রাজপুত বালক সংঘের হাত ধরে।
ক্লাবের বর্তমান সভাপতি কৃষ্ণা সিংহ রায় বলেন, বছর সাতেক আগে এখানে হওয়া দুর্গাপুজোতে ক্লাবে নোটিশ টাঙানো হয়। তাতে পুরনো জগদ্ধাত্রী পুজো আর করা যাচ্ছে না বলে নোটিশে উল্লেখ করা ছিল। এই সময় এলাকার মহিলারা এগিয়ে আসেন। তাঁরা পুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় মহিলা পরিচালিত কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে প্রথম মহিলা পরিচালিত জগদ্ধাত্রী পুজো।
আরও পড়ুন: Jagaddhatri Puja: নদিয়ার শান্তিপুরে দেবী ‘রূপোকালী’র রূপ থেকে চোখ ফেরানো কঠিন
পুজোটা (Jagaddhatri Puja) বৈষ্ণব মতে হয়। একদিনে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পুজো হয়। পুজোতে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। পোলাও, খিচুড়ি, লুচি, পায়েস, ৫ রকমের ভাজা, মিষ্টি, ফল দেওয়া হয়। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রতিমা রায় ও বৈশালী মুখার্জি বলেন পুজোতে সমস্ত কাজ করার পাশাপাশি ঢাকও বাজান মহিলারাই। ক্লাবের সমস্ত মহিলারা কাজের পাশাপাশি প্রতিটি বাড়িতে পুজোর ভোগ পৌঁছে দেন। প্রথা মেনে স্থানীয় জলাশয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনও করা হয়।