সুরজিৎ দাস, নদিয়া, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা : Untold Story At Nadia ভাঙা টিনের ঘরে বসবাস। বর্ষা হলেই ঘরে জল পড়ে। একাধিকবার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়েছেন কিন্তু কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাননি। হ্যাঁ, দুঃখ-দুর্দশার কথা বলছি ৯৬ বছর বয়সি মানদা বসাকের। এ বিষয়ে পঞ্চায়েত সদস্য মন্টু বসাক জানান, ওই পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র, সরকারি ঘর পাওয়ার উপযুক্ত। বেশ কয়েকবার কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও কী কারণে তা মঞ্জুর হচ্ছে না বুঝতে পারছি না। পঞ্চায়েত প্রধান তপতী বসাক জানান, কেন এমন হচ্ছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।
নদিয়ার ফুলিয়া চটকাতলার ৯৬ বছর বয়সি মানদাদেবীকে আজও ভরসা করতে হয় সেই চরকা কাটা উপার্জনের উপরেই। একাত্তরের দেশভাগের আগে ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা ছিলেন মানদা বসাক। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিবাহ। তার ঠিক কয়েক বছর পরে ইংরেজদের কাছ থেকে পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকেই। কিন্তু একাত্তরের দেশভাগের তিক্ত অভিজ্ঞতার আগেই এদেশের নদিয়ার ফুলিয়া চটকাতলায় ঠাঁই হয়েছিল তাঁদের। ১৯৫০ সালের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের স্মৃতি আজও তাঁর চোখে-মুখে– ওদেশের বঙ্গবন্ধু হোক বা এদেশের জওহরলাল নেহরু।
ভাঙা টিনের ঘরে বসবাস, বর্ষা হলেই ঘরে জল পড়ে Untold Story At Nadia
চরকা কেটেই তিন ছেলে, এক মেয়েকে বড় করে তোলা মানদার। বড় ছেলের বয়স এখন ৬৫, ছোট ছেলের ৪৩। ছোট ছেলেমেয়েদের রেখে মৃত্যু হয় মানদাদেবীর স্বামীর। পেশায় তিনি ছিলেন তাঁত শ্রমিক। চার ছেলেমেয়ের পরিবার ভেসে যেতে দেয়নি একমাত্র চরকা। সেসময়ের টিনের বেড়া এবং ছাউনি বেশ কয়েক জায়গায় ফুটো হয়ে গেলেও আজও একইভাবে রয়েছেন তিনি। বৃষ্টি পড়লে জলও ঢোকে মানদার টিনের বাড়িতে।
মেলেনি ছেলেদের একশো দিনের কাজ বা মায়ের বার্ধক্য-বিধবা ভাতা Untold Story At Nadia
প্রদীপের তলায় থাকে অন্ধকার! তাই হয়তো বাড়ির একেবারে সন্নিকটে সুতোর মালিক বীরেন বসাক পদ্মশ্রী পেলেও, তাঁর গগনচুম্বী মন্দিরের কিছুটা আলো রাতের অন্ধকারে কাটানো ছাড়া কিছুই স্বাদ পাননি মানদাদেবী। উন্নয়নের পিচরাস্তা দোরগোড়ায় হলেও তাঁর বাড়িতে পড়েনি এতটুকু ইট-বালি-সিমেন্ট। ছেলেদের একশো দিনের কাজ হোক বা মায়ের বার্ধক্য-বিধবা ভাতা– কিছুই কোনওদিন পাওয়া যায়নি বলে জানালেন ছোট ছেলে কমল বসাক। ৬৫ বছর বয়সি বড় ছেলে শ্যামল বসাক অভিমানের সুরে বলেন, বেশ কয়েকবার সরকারি প্রকল্পে ঘরের কাগজপত্র জমা দিয়েও মেলেনি ফল। আজীবন চরকায় সুতো কেটে সংসার চালানো সত্বেও তাঁতি কার্ড বা তাঁত কিছুই মেলেনি। পঞ্চায়েত প্রধান তপতী বসাক বলেছেন খোঁজ নিয়ে দেখছি। এখন দেখার কবে প্রশাসনের নজর পড়ে মানদার সংসারে!
Untold Story At Nadia
—–
Published by Subhasish Mandal