কৌশিক বসু, দুর্গাপুর, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা : Students of Durgapur stuck in Ukraine ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরত আনতে কিয়েভে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান পৌঁছালেও বিমানটিকে অবতরণ করানো যায়নি। পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় মাঝপথ থেকেই ফেরত আসে বিমান। এরপরেই শুরু হয় আতঙ্কের ছায়া। আটকে থাকা দুর্গাপুরের ছাত্রছাত্রীদের পরিবার আশঙ্কার দিন গুনতে শুরু করেন তারপর থেকেই।
দুর্গাপুরের বেনাচিতির বাসিন্দা জিন্নত আলম বর্তমানে পড়াশোনার জন্য ইউক্রেনের ইভানো শহরে রয়েছে। ইভানো ফ্রাঙ্কিভিস্ক ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। যুদ্ধের খবর দুর্গাপুরে পরিবারের কাছে আসা মাত্রই পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। মা নাজ পারভিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা সাদার আলাম জানান, মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয় সোমবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মেয়ের সাথে ফোনে রীতিমতো কথাবার্তা চলছে। মেয়ে যে শহরে থাকে সেই শহরে ইতিমধ্যেই জল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবাও যেকোনও মুহূর্তে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। টাকা পাঠালেও সেখানে এটিএমে লম্বা লাইন হওয়ায় টাকা তুলতে পারছে না। দু’-তিন দিনের খাবার আপাতত মজুত রয়েছে। মেয়ের কাছে যা খবর পাচ্ছেন তাতে ভয়ানক পরিস্থিতি বলে জানান তিনি। আপাতত সরকারের সাহায্যের আশায় বসে পরিবার। মেয়েকে দেশে কীভাবে ফেরাবেন সেই নিয়ে দিশেহারা বাবা-মা।
বোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে Students of Durgapur stuck in Ukraine
অপরদিকে দুর্গাপুরের স্টিল টাউনশিপের টেগোর অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা নেহা খান একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাঁর বাবা-মা থেকে বোন সকলেই চিন্তিত। নেহা ফোনে জানান, তাঁর ঠিকানা থেকে ১০-১৫ মিনিটের রাস্তা দূরে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকী কালো ধোঁয়ায় ঢাকা আকাশের ভিডিও তাঁর মোবাইলবন্দি হয়েছে। মোবাইলে ভিডিও কলে অনবরত কথা হচ্ছে পরিবারের সাথে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে তাঁদের আবাসনের নীচে বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি বুঝলে নিরাপত্তার জন্য সেখানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে সকলকে। বেশ আতঙ্কের মধ্যে প্রহর গুনছেন নেহারা। নেহার বাবা ফিরোজ খান জানান, পরিবারের সকলে খুব চিন্তিত।
আবাসনের নীচে সুড়ঙ্গে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে Students of Durgapur stuck in Ukraine
দুর্গাপুরের ইস্পাত নগরীর ‘এ’ জোনের রাহুল প্রসাদ রায় যিনি বর্তমানে ইউক্রেনের খারকোভে রয়েছেন। ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান বর্তমানে তিনি ভিএন কারাজিন খারকোভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের মেডিক্যালে সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। বেনাচিতির গুরু তেগবাহাদুর স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর ইউক্রেনে মেডিক্যাল নিয়ে পড়তে যান ২০১৯ সালে। বৃহস্পতিবার যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পরই ইউনিভার্সিটির তরফ থেকে কলেজ বন্ধের নোটিশ দিয়ে দেওয়া হয়। আগামী সোমবার পর্যন্ত কলেজ বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দেশে ফেরার সমস্ত রাস্তা বন্ধ। পার্শ্ববর্তী বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে তিনিও হস্টেলেই রয়েছেন। তিনি জানান দুর্গাপুরে পরিবারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও খারকোভ শহর থেকে অনেকটা দূর হওয়ায় আপাতত সেই শহরে সেভাবে কোনও প্রভাব পড়েনি। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ রেশন সামগ্রী তাঁদের জোগাড় করে রাখতে বলা হয়েছে। Students of Durgapur stuck in Ukraine
অন্য এক মেডিক্যাল পড়ুয়া দুর্গাপুরের বেনাচিতির বাসিন্দা শুভজিৎ সিনহাও বর্তমানে খারকোভের ভিএন কারাজিন খারকিভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনিও গুরু তেগবাহাদুর স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। ইউক্রেনের পরিস্থিতি জটিল বলে দাবি করে বাড়ি ফেরার ইচ্ছে প্রকাশ করেন ফোনে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে। তবে পরিবারের সাথে তাঁর কথা হচ্ছে নিয়মিত বলে জানান। পাশাপাশি ভারত সরকারের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে তাঁর আশা, সরকার নিশ্চয়ই দেশে ফেরার কোনও ব্যবস্থা করবে।
মোটের উপর শুভজিৎ, রাহুল, নেহার সাথে কথা বলে জানা যায় দুর্গাপুর-সহ পশ্চিমবঙ্গের কয়েকশো ছাত্রছাত্রী ইউক্রেনে এই মুহূর্তে আটকে রয়েছেন। সরকার যত তাড়াতাড়ি তাঁদেরকে দেশে ফেরাতে পারে তার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন তাঁরা।
Students of Durgapur stuck in Ukraine
আরও পড়ুন : Indians stranded in Ukraine ইউক্রেনে আটকে রায়দিঘি বিধানসভার দুই পড়ুয়া, আতঙ্কিত পরিবারের পাশে বিধায়ক
———–
Published by Subhasish Mandal