রণজিৎ দাস, মালদা, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা : Allegations of panchayat corruption জেসিবি দিয়ে চলছে ১০০ দিনের খাল খননের কাজ। এমনই গুরুতর অভিযোগ তৃণমূল পরিচালিত এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে। সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে কাজ করছে প্রধান বলে কাজ রুখে দিলেন তৃণমূলেরই কয়েকজন সদস্য। বিরোধিতার মুখে পড়ে প্রধানের আজব দাবি এটি ১০০ দিনের কাজ নয়। মানুষের দানের টাকায় চলছে জেসিবি দিয়ে খাল খননের কাজ। কিন্তু কে বা কারা টাকা দান করেছেন, সেই টাকার পরিমাণই বা কত, সেই নিয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ কোনও আধিকারিক। এমনকী খাল খননের জন্য দানে পাওয়া টাকার কোনরকম নথিপত্র দেখাতে পারেননি কেউই। শুধুমাত্র নিজস্ব মুনাফার জন্য গুটিকয়েক মুষ্টিমেয় সদস্যদের নিয়ে বেআইনিভাবে কাজ করছেন বর্তমান প্রধান মনিরা খাতুন বলে অভিযোগ তোলেন খোদ তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান আবু কালাম আজাদ।
কাজের মোট বরাদ্দ ২৪ লক্ষ ৬ হাজার ৮১ টাকা Allegations of panchayat corruption
জানা গেছে এনায়েতপুর মিরাগ্রামের শেখ এজাবুলের জমি থেকে ছোট দরগা পর্যন্ত ক্যানেল সংস্করণের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নেয় এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। যার স্কিন কোড 3209007004/IC/GIS/713062। মোট বরাদ্দ ২৪ লক্ষ ৬ হাজার ৮১ টাকা। এই খাল খনন কাজে ১০ হাজার ৬১৪টি শ্রমদিবস হওয়ার কথা। সমস্ত বিবরণ দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় বোর্ডও টাঙানো হয়। কিন্তু অভিযোগ সোমবার সকালবেলা ১০০ দিনের খাল খনন কাজে গ্রামের সাধারণ শ্রমিককে ব্যবহার না করে জেসিবি দিয়ে খাল খনন করা শুরু করে এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। কাজের তদারকিতে হাজির ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী মির আবদুল মান্নান ও এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের স্বামী তথা এলাকার তৃণমূল নেতা তাফাজ্জুল হোসেন। কিন্তু এই কাজকে বেআইনি বলে রুখে দেন সদ্য অনাস্থার মাধ্যমে প্রধান পদ থেকে বরখাস্ত আবু কালাম আজাদ।
প্রচুর ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির প্রাক্তন প্রধান Allegations of panchayat corruption
আরও পড়ুন : Young man shot in Malda চা খেতে বেরিয়ে গুলিবিদ্ধ যুবক, ভর্তি মালদা মেডিক্যালে
এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান আবু কালাম আজাদ প্রচুর ১০০ দিনের কাজের শ্রমিককে নিয়ে হাজির হন ঘটনাস্থলে। তিনি দাবি তোলেন, কেন সাধারণ মানুষকে দিয়ে কাজের বদলে জেসিবি দিয়ে কাজ চলছে? এই বিষয়ে কাজের তদারকিতে থাকা মির আবদুল মান্নান জানান, লোকের দানের টাকায় কাজ চলছে। কিন্তু কে টাকা দান করেছেন বা কত টাকা দিয়েছেন তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ তিনি। তবে লোকের দানের টাকার কাজে কেন তাঁরা তদারকি করছেন? সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁদের দাবি তাঁরা কোনও কাজের তদারকি করছেন না। কাজ হচ্ছে জানতে পেরে সাধারণ মানুষের মতো কাজ দেখতে এসেছেন তাঁরাও।
উল্লেখ্য গত দেড় মাস আগে অনাস্থার মাধ্যমে তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান আবু কালাম আজাদকে বরখাস্ত করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা। নতুন প্রধান নির্বাচিত হন তৃণমূলের মনিরা খাতুন। প্রাক্তন প্রধান আবু কালাম আজাদ এ বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেন, বর্তমান পঞ্চায়েত বোর্ড জগাখিচুড়ির বোর্ড। এই বোর্ড গঠন হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য নয়, প্রধান-সহ সদস্যদের কামাইয়ের জন্য। এই কাজে ১০ হাজার ৬১৪টি শ্রমদিবস উৎপন্ন হবে অর্থাৎ কয়েক হাজার শ্রমিক ১০০ দিনের কাজ পাবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, খাল খনন কাজে সাধারণ মানুষকে ১০০ দিনের কাজ না দিয়ে করে জেসিবির মাধ্যমে কাজ করে প্রচুর প্রচুর মুনাফা করতে চেয়েছেন প্রধান। জেসিবির মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিজেদের পেটুয়া শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেছেন বলে তাঁর অভিযোগ।
সমস্ত অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি প্রধানের Allegations of panchayat corruption
কিন্তু সমস্ত অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রধান মনিরা খাতুন। এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের স্বামী তথা তৃণমূল নেতা তাফাজ্জুল হোসেন জানান, খাল খননের কাজটি গত কর্মবছরে ধরা হয়েছিল। কিন্তু কাজের জিওটেক করতে দেখা যায় এলাকাটি এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনও মৌজায় পড়ে না। এই জায়গাটি চৌকি মিরজাদপূর অঞ্চলের অন্তর্গত। শেষমেষ এই প্রকল্পে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয় পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কাজ না হওয়ায় এলাকার কৃষকরা চাঁদা তুলে রাস্তা সংস্কারের কাজ করছে।
গোপন মিটিংয়ের কথা ফাঁস করলেন প্রাক্তন প্রধান Allegations of panchayat corruption
তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান আবু কালাম আজাদ অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েকদিন আগে জেসিবি দিয়ে খাল খননের কাজের জন্য একটি গোপন মিটিং হয় সদস্যদের নিয়ে। সেই মিটিংয়ে আমিও হাজির ছিলাম। জেসিবি দিয়ে খাল খননের জন্য প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে অগ্রিম কুড়ি হাজার টাকা দাবি করেন প্রধান। কাজের পর শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টের টাকা থেকে মুনাফা-সহ প্রত্যেক সদস্যকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। সেই গোপন মিটিংয়ে আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম জেসিবি দিয়ে ১০০ দিনের কাজ মেনে নেওয়া হবে না। প্রাক্তন প্রধান দাবি করেন, ব্লক ও জেলা প্রশাসনের একাংশের মদতে বেআইনি ভাবে কাজ করছে প্রধান।
এ বিষয়ে মানিকচকের বিডিও জয় আমেদ জানান, এখনও পর্যন্ত এরকম কোনও লিখিত অভিযোগ আমি হাতে পায়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
—–
Published by Subhasish Mandal