কৌশিক বোস, দুর্গাপুর, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা : দুর্গাপুর নগর নিগম (Durgapur Municipal Corporation) নির্বাচনের আগে শহরজুড়ে ব্যাপক রাজনৈতিক শোরগোল। এক তৃণমূল কাউন্সিলারের ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে জল্পনা। শহরের এক বিজেপির কাউন্সিলারের গ্রুপে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে নিজের ফেসবুক প্রোফাইল ওয়ালে পোস্ট তৃণমূল কাউন্সিলরের। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেও বিজেপির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ ওই কাউন্সিলারের। অন্যদিকে চক্রান্তের অভিযোগ খণ্ডন করে বিজেপি বিধায়কের দাবি, তৃণমূলের অনেকে যোগাযোগ রাখছেন তাঁদের সাথে।
সূত্রের খবর, দুর্গাপুর নগর নিগমের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার মানস রায় দিন দুয়েক আগে তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলার চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলীয় ফেসবুক গ্রুপে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে একটি পোস্ট করেন। চন্দ্রশেখর লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। মানসবাবুর প্রোফাইলে কাউন্সিলার চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ বিজেপির প্রতীকের একটি ব্যানার পোস্ট করা হয়েছে। আর তাতেই বিজেপির যুব নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলীয় গ্রুপে যোগ হওয়ার আর্জি জানানো আছে। স্বভাবতই তৃণমূল কাউন্সিলর মানস রায়ের এরূপ পোস্ট ঘিরে শিল্পাঞ্চল জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক রাজনৈতিক জল্পনা। কারণ মাস ছয়েক পরে দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন। আর তার আগেই এক তৃণমূল কাউন্সিলারের এহেন ফেসবুক পোস্ট! যদিও এতকিছুর পরেও এই ঘটনাকে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত বলে অভিযোগ করছেন দুর্গাপুর নগর নিগমের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার মানস রায়। তিনি দাবি করেন, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে এই অপকর্ম করেছে বিজেপি।
Speculation in TMC councilor’s Facebook post in Durgapur বিজেপির ফেসবুক গ্রুপে যোগ দেওয়ার আর্জি তৃণমূল কাউন্সিলারের
একই অভিযোগে সরব হন দুর্গাপুর নগর নিগমের ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সামনের পুরসভা নির্বাচনে দুর্গাপুরে একটাও আসন বিজেপি পাবে না। ওদের দল থেকে লোকজন তৃণমূলে চলে আসছে। আর তাই যে ঘটনা ঘটেছে সবটাই বিজেপির চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।’
আরও পড়ুন : Dharti Mohan Roy left BJP জলপাইগুড়ি বিজেপিতে ভাঙন, দল ছেড়ে তৃণমূলে ধর্তীমোহন
ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে জল্পনা বাড়িয়ে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্য বিজেপির অন্যতম সম্পাদক লক্ষণ ঘোড়ুই জানান, ‘তৃণমূলের সবাই তো খারাপ নয়। যদি কেউ আসতে চান তাহলে দল বিচার বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। দুর্গাপুরে তৃণমূলের অনেকেই যোগাযোগ করছেন।’
অন্যদিকে তৃণমূল-বিজেপির এই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কটাক্ষ করেছেন সিপিআইএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার। তিনি বলেন, ‘গোটাটাই তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে হ্যাকিং আর মোবাইল সিমের মতো পোর্টিং হচ্ছে। কারণ দুটো দলেরই কোনও নীতিই নেই।’
Speculation in TMC councilor’s Facebook post in Durgapur বিজেপির ফেসবুক গ্রুপে যোগ দেওয়ার আর্জি তৃণমূল কাউন্সিলারের
কিন্তু রাজনৈতিক মহলে উঠেছে অন্য প্রশ্ন? তাহলে কি অন্য রসায়নের কথা মাথায় রেখেই তৃণমূল কাউন্সিলারের এমন একটি পোস্ট? দলীয় নেতৃত্বকে নগর নিগম নির্বাচনের আগে টিকিট পাওয়ার প্রশ্নে পাল্টা চাপে রাখার জন্যই এই পোস্ট?
দুর্গাপুর নগর নিগমে গত ২০১২ সালে বামেদের সরিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ফের ২০১৭ সালে দ্বিতীয়বারের ক্ষমতায় আসে তারা। ২০১৭ সালের সেই নির্বাচনে তৃণমূল ভোট লুট করে জিতেছে বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। গত ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দুর্গাপুর নগর নিগমের মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাজ্যের প্রাক্তন আমলা দিলীপ অগস্তি। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। ২৪ ডিসেম্বর দুর্গাপুর নগর নিগমের নতুন মেয়র হিসেবে শপথ নেন শহরের প্রাক্তন মহানাগরিক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের সহধর্মিনী অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়।
———–
Published by Subhasish Mandal