সাম্যজিৎ ঘোষ, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা: Real win match, Chelsea win hearts; মহাকাব্যিক লড়াই! এই কথা দিয়েই শুরু করতে হয় এই ম্যাচের রিপোর্ট। শিহরণ-রোমাঞ্চ; লড়াই, রক্ত,ঘাম, আবেগ, কম কম ছিলনা রসদের। পরতে পরতে ছড়াল উত্তেজনা। ‘হারানোর কিছু নেই’, যেন এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে চেলসি, রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ বের্নাবেউয়ের সবুজ গালিচায় নিজেদের মেলে ধরল সর্বোচ্চ সেরা রূপে। প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে একে একে জালে বল পাঠাল তিনবার। কিন্তু খাদের কিনারা থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল রিয়াল মাদ্রিদ। অতিরিক্ত সময়ে ভিনিসিউস-বেনজিমা জুটিতে ভর করে উঠে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে। এদিনের রাত রিয়ালের রাত।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে মঙ্গলবার রাতে কোয়ার্টার-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৩-২ গোলে হেরে গেছে রিয়াল। তবে প্রথম লেগের ৩-১ ব্যবধানে জয়ের সুবাদে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলের গড়ে শেষ চারে উঠেছে কার্লো আনসেলত্তির দল।
রিয়ালকে তাদেরই মাঠে বিবর্ণ করে তুলতে যা যা দরকার ছিল, ৯০ মিনিটে ঠিক তাই তাই-ই করে দেখাল চেলসি। ডিফেন্স লাইন বা রক্ষণরেখাকে ওপরে তুলে এনে একইসঙ্গে দারুণ সব আক্রমণের পাশাপাশি ঘরও আগলে রাখল।
ম্যাসন মাউন্টের গোলে আত্মবিশ্বাসী শুরুর পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। পুরো মাঠেই প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রাখে তারা। দ্বিতীয়ার্ধেও একইভাবে শুরু করে আন্টোনিও রুডিগারের লক্ষ্যভেদের পর টিমো ওয়ারনারের দারুণ গোলে চালকের আসনে বসে যায় তারা। ফল তখন চেলসির পক্ষে ৩-০।
আচমকাই মোড় ঘুরে গেল খেলার। এরপরই মাদ্রিদে রদ্রিগোর গোল। বদলে যায় দৃশ্যপট। চেলসির আক্রমণের ধার অবশ্য কমেনি; তবে জালের দেখা আর পায়নি তারা। নির্ধারিত সময়ের বিবর্ণ করিম বেনজিমা অতিরিক্ত সময়ে গড়ে দেন ব্যবধান। যে কাজ তিনি এ মরসুমে বেশ কয়েকবার করেছেন।
প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া আশা পুনরুজ্জীবিত করতে, লড়াইয়ে ফিরতে যেকোনও মূল্যে গোল চাই- ম্যাচের শুরু থেকে চেলসির খেলায় ফুটে ওঠে এই মরিয়া ভাব। রিয়ালের কারও পায়ে বল গেলেই তাকে ঘিরে ধরছিল চেলসির দুই-তিন জন। ফুটবলের পরিভাষায় যাকে বলে প্রেসিং ফুটবল । তাতে প্রথম কয়েক মিনিটে তো নিজেদের অর্ধ থেকে বের হতেই পারছিল না রিয়াল।ম্যাচের স্কোরলাইন যখন ৩-০, দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে এগিয়ে চেলসি। সেমি-ফাইনাল তখন তাদের নাগালের মধ্যে।
৭৮তম মিনিটে আক্রমণের ধার বাড়াতে কাসেমিরোকে তুলে রদ্রিগোকে নামান আনচেলত্তি। সিদ্ধান্তটা কতটা সঠিক ছিল, তার প্রমাণ মিলে যায় দুই মিনিট পরই। মদ্রিচের অসাধারণ এক ক্রসে দারুণ ভলিতে বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। জেগে ওঠে রিয়াল, জেগে ওঠে বের্নাবেউ।
অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখার সম্ভাবনা ধাক্কা খেলেও চেলসির আক্রমণ থামেনি। নির্ধারিত সময় শেষে ইনজুরি টাইমের চার মিনিটে দুটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি চেলসির ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক। প্রথমবার গোলমুখে ফাঁকায় বল পেয়ে উড়িয়ে মারার পর দ্বিতীয়বারও ক্রসবারের ওপর দিয়ে বল পাঠান যুক্তরাষ্ট্রের মিডফিল্ডার।
অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হতেই যেন মরসুমে রিয়ালের সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারিগর বেনজিমা-ভিনিসিউস জ্বলে ওঠেন। জ্বলে ওঠে রিয়াল। বাঁ দিকের প্রান্ত থেকে ব্রাজিলিয়ান সতীর্থের ক্রস ফাঁকায় পেয়ে অনায়াসে হেডে গোল করেন ফরাসি স্ট্রাইকার। অতিরিক্ত সময়তেও চেলসির আক্রমণের ধার কমেনি। মরণ-বাঁচন লড়াইয়ে নেমেছিল টমাস টুহেল এর ছেলেরা। কোচ নিজেও গর্বিত তার ছেলেদের ফুটবলে। তবে রেফারির বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ রয়েছে একটি গোল বাতিলকে নিয়ে টু হেল রেফারিকে বিঁধতে ছাড়েননি।
টুর্ণামেন্টে বেনজিমার গোল হল ১২টি। তার চেয়ে একটি গোল বেশি করে তালিকার শীর্ষে বায়ার্ন মিউনিখের রবার্ট লেভানডস্কি।
গতবার চেলসির কাছে হেরেই রিয়ালকে বিদায় নিতে হয়েছিল সেমিফাইনাল থেকে। এবার তাদের হারিয়েই পা রাখল শেষ চারে। তাই ঘরের মাঠে ম্যাচে দুই লেগের লড়াইয়ে পাওয়া জয়ে রিয়ালের প্রতিশোধের জ্বালা হয়তো অনেকটাই মিটল। অন্যদিকে স্বপ্নভঙ্গ হলেও চেলসি গর্বিত তারা জেতার জন্য সবই করেছিল।
শেষ চারে ম্যানচেস্টার সিটি অথবা আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলবে রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নরা।
Published by Samyajit Ghosh