El Classico: Barcelona demolish Real
সাম্যজিৎ ঘোষ, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা: এল ক্লাসিকো মানে নব্বই মিনিটের যুদ্ধ। ম্যাচের আগে কখনই বলা যায়না কে জিতবে, কে হারবে। ঘনঘন বদলায় ম্যাচের রং। এবার রিয়ালের ঘরের মাঠে দাপিয়ে গেল বার্সেলোনা। পরপর পাঁচটি এল ক্লাসিকোয় হারের পর জিতল নতুন বার্সেলোনা।
বার্সেলোনা কী করতে পারে সেটা দেখানোর উপযুক্ত মঞ্চ ক্লাসিকো- কোচের এমন উজ্জীবিত বার্তায় যেন জেগে ওঠে পুরো দল। খেলল অবিশ্বাস্য ফুটবল। দখল নিল মাঝমাঠের, আক্রমণভাগ হয়ে উঠল বিধ্বংসী। খেই হারানো রিয়াল মাদ্রিদ কোনো জবাব খুঁজে পেল না।
ম্যাচের আগে যে ফল কেউ ভাবতে পারেনি, সেটাই স্কোরলাইনে ধরা দিল। বিস্ময়ের সব মাত্রা ছাপিয়ে সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে গোল উৎসব করল বার্সেলোনা। রিয়ালকে গুঁড়িয়ে দিল ৪-০ গোলে। পরপর ৫ ক্লাসিকোয় জয়ের পর জয়রথ থামল রিয়ালের।
দুই অর্ধে দুটি করে গোল করে বার্সেলোনা। পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াং দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর ব্যবধান বাড়ান রোনালড আরাহো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফেররান তোরেস জালে বল পাঠানোর কিছু পরই নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন অবামেয়াং।
এই গোলগুলো ছাড়াও পুরো ম্যাচে অসংখ্য সুযোগ তৈরি করেছে বার্সেলোনা। প্রায় ৬০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশ্যে ১৮টি শট নেয় তারা, যার ১০টি লক্ষ্যে ছিল। অবামেয়াং, ফেররান, উসমান দেম্বেলে নিশ্চিত কয়েকটি সুযোগ নষ্ট না করলে ব্যবধান আরও বাড়তে পারত ।
চোটে খেলতে না পারা করিম বেনজেমার অনুপস্থিতি রিয়ালের আক্রমণভাগে ফুটে ওঠে প্রকটভাবে। তাদের ১৪ শটের কেবল চারটিই থাকে লক্ষ্যে।
ফরাসি তারকার শূন্যতা পূরণে আনচেলত্তি যে ৪-১-৪-১ ফরমেশন সাজান, তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। মাঝমাঠের দখল হারানোর পাশাপাশি রক্ষণ হয়ে পড়ে উন্মুক্ত। যার সুবিধা শতভাগ কাজে লাগিয়েছে প্রতিপক্ষ।
চলতি মরসুমে লিগে রিয়ালের এটি তৃতীয় হার। আগের দুটি ছিল, গত অক্টোবরে এস্পানিওলের বিপক্ষে ২-১ ও জানুয়ারিতে গেতাফের বিপক্ষে ১-০। ঘরের মাঠে রিয়াল হারল এই প্রথম।
জাভি হারনান্দেজের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া বার্সেলোনা যেন হারতেই ভুলে গেছে। কিছুদিন আগেও যে দলের কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না, তারাই এই নিয়ে লিগে জিতল টানা ৫ ম্যাচ। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে অপরাজিত রইল টানা ১২ ম্যাচ, এর মধ্যে জয় ৯টি।দারুণ ছন্দে থাকা দুই দলের লড়াই শুরুতেই উত্তাপ ছড়ায়। ম্যাচ শুরুর ১২ সেকেন্ডের মাথায় ফেররানকে আটকাতে ফাউল করেন রিয়াল ডিফেন্ডার এদের মিলতাও।
প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ রিয়াল পায় পঞ্চম মিনিটে। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে রদ্রিগোর নেওয়া শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। দুই মিনিট পর গতির ঝলক দেখিয়ে বক্সে ঢুকে আরাহোকে কাটিয়ে কাটব্যাক করেন ভিনিসিউস জুনিয়র। ছুটে এসে ফেদে ভালভেরদের নিচু শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।
এরপর অবশ্য বার্সেলোনার আক্রমণের ঝড় বেড়ে যায়। চাপে পড়ে যায় রিয়াল ডিফেন্স । ২৯তম মিনিটে আর বাঁচতে পারেনি রিয়াল। ক্যারিয়ারে নতুন উদ্যম খুঁজে পাওয়া দেম্বেলে ডান দিক থেকে দারুণ ক্রস বাড়ান আর কোনাকুনি হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন অবামেয়াং। রিয়ালের দুঃস্বপ্নময় রাতের শুরুও হয়।
গোল পেয়ে আরও উজ্জ্বীবিত হয়ে ওঠে বার্সেলোনা। ৩৫তম মিনিটে অবশ্য সমতা টানার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ভিনিসিউস। প্রতি-আক্রমণে সবাইকে পেছনে ফেলে ওয়ান-অন-ওয়ানে গোলরক্ষককে কাটাতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। ভারসাম্য হারিয়ে নিজেই পড়ে যান।
এর তিন মিনিট পর রিয়াল সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেয় আরাহোর গোল। অ্যাসিস্টের ভূমিকায় আবারও দেম্বেলে। তার আরেকটি দারুণ ক্রসে লাফিয়ে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন উরুগুয়ের ডিফেন্ডার।
চলতি মরসুমে অনেকবার দেখা গেছে, খাদের কিনারা থেকে রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা। এখানে তাদের সেই সুযোগই দেয়নি বার্সেলোনা। বিরতির পর ম্যাচ শুরুর ১৭ সেকেন্ডের মাথায়ই প্রতি-আক্রমণে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান ফেররান। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে বাইরে মেরে বসেন তিনি। পরের মিনিটেই সেই হতাশা মুছে দেন ফেররান। অবামেয়াংয়ের ছোট পাস বক্সে পেয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ম্যানচেস্টার সিটি থেকে জানুয়ারিতে কাম্প নউয়ে আসা এই তরুণ।