Maidan’s own Lev Yashin, Legendary Goalie Sanat Seth Dies aged 93
৯৩ বছরে প্রয়াত হলেন ভারতীয় ফুটবলের বাজপাখি রবীন্দ্রসঙ্গীতে অনুরাগী, ময়দানের এনসাইক্লোপিডিয়া
ইন্ডিয়া নিউজ বাংলাঃ বাজপাখির ওড়া হয়তো কালের নিয়মে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই কিংবদন্তি বাজপাখি ৯৩ বছরে পৌঁছেও আমাদের ধরাছোঁয়ার মধ্যই ছিলেন। এবার খাঁচা ছেড়ে উড়েই গেলেন তিনি।
ভারতীয় ফুটবলের আরও একটি অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। চলে গেলেন সনৎ শেঠ। গোল পোস্টের একদিক থেকে অন্যপ্রান্তে চকিতে উড়ে গিয়ে গোল বাঁচানোর দক্ষতা দেখেই ময়দানে তাঁর নাম হয়ে যায় বাজপাখি। অনেকে ওই দক্ষতার জন্য তাকে তুলনা করতেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি গোলকিপার গর্ডন ব্যাঙ্কসের সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার পানিহাটিতে নিজের বাড়িতে সকাল ১০টা ৪০ নাগাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবাদপ্রতিম গোলকিপার। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। পায়ের ব্যথায় ভুগছিলেন অনেক বছর ধরে। সঙ্গী ছিল ক্রাচ। সেইসঙ্গে বার্ধক্যজনিত একাধিক অসুখেও ভুগছিলেন।তাঁর স্ত্রীরও মৃত্যু হয়েছে বছরখানেক আগে। পুত্র, পুত্রবধূ ও দুই নাতনিকে নিয়েই পানিহাতিতে থাকতেন এই গোলকিপার।
রবীন্দ্রসঙ্গীতে অনুরাগী
পানিহাটি বটতলায় আপাত শান্ত পাড়ায় যদি আপনি কোনও বৃদ্ধ গলায় রবীন্দ্র সংগীত শুনতে পান বা রেডিয়োর আওয়াজ পান তাহলে জানবেন সেটা সনৎ শেঠের । লাল রঙের গেট খুলে বাড়িতে প্রবেশ করলে আগন্তুকের পরিচয় জানার আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে অতিথি সম্ভাষণ করতেন। তবে বৃহস্পতিবারের পর থেকে এই মুহূর্তগুলো আর চোখের সামনে ভেসে উঠবে না।
কিংবদন্তি পিকে ব্যানার্জি, চুনী গোস্বামীদের সঙ্গেও খেলেছেন
তিন কাঠির নীচে সনৎ শেঠ থাকা মানে দলের বাকি ১০ জন একেবারে নিশ্চিন্ত, ময়দানের প্রবাদ
১৯৫৪-র ম্যানিলা এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলে ছিলেন। তবে প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পাননি।
ময়দানে প্রবেশ ১৯৪৯ সালে। তখন সনৎ শেঠের বয়স মাত্র ১৯। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা লিগে গোলকিপার হিসেব নাম করছেন। হঠাৎ একদিন ডাক এল রেলওয়ে এফসি ফুটবল ক্লাব থেকে। তার কারণ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ তাদের প্রথম গোলকিপার অসুস্থ। দ্বিতীয় গোলরক্ষকের চোট। পাড়ার পরিচিত ফুটবল কর্তা ফণী ভট্টাচার্যের মাধ্যমে তাঁকে ডেকে পাঠান রেল দলের কর্তা স্বরাজ ঘোষ। সেই শুরু। তারপর ধীরে ধীরে ময়দানে নিজের জায়গা করে নিতে থাকেন পানিহাটির সনৎ। তিন কাঠির নীচে সনৎ শেঠ থাকা মানে দলের বাকি ১০ জন একেবারে নিশ্চিন্ত। ময়দানে কান পাতলে এখনও সেই গল্পগুলো শোনা যায়। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কলকাতা ময়দানে দাপিয়ে খেলেছেন গোলকিপার সনৎ শেঠ। ১৯৫২ সালে সই করেন এরিয়ান ক্লাবে। ইস্টার্ন রেল, এরিয়ান, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের হয়ে তিন কাঠির নিচে দাঁড়িয়ে অজস্র ম্যাচে দলকে নির্ভরতা দিয়েছেন। খেলেছেন বাংলার হয়ে। জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়েছিলেন। কিংবদন্তি পিকে ব্যানার্জি, চুনী গোস্বামীদের সঙ্গেও খেলেছেন। ইস্টবেঙ্গেলের হয়ে হয়ে খেলেই ফুটবল কেরিয়ারে ইতি টেনেছিলেন সনৎ শেঠ। কিংবদন্তি ফুটবলারের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ কলকাতা ময়দান।
প্রবল স্মৃতিশক্তির অধিকারী এই মানুষটির কাছে ফুটবল ইতিহাস জানতে ছুটে যেতেন অনেকেই। ময়দানের এনসাইক্লোপিডিয়া বলা হত তাঁকে
১৯৫৪-র ম্যানিলা এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলে ছিলেন। তবে প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পাননি। তখনকার দিনে আল্তর্জাতিক চতুর্দলীয় বা কোয়াড্রাঙ্গুলার প্রতিযোগিতায় পরপর দুবছর জাতীয় দলে ছিলেন। ১৯৫৫ সালে রাশিয়া সফরেও গিয়েছিলেন তিনি। প্রবল স্মৃতিশক্তির অধিকারী এই মানুষটির কাছে ফুটবল ইতিহাস জানতে ছুটে যেতেন অনেকেই। ময়দানের এনসাইক্লোপিডিয়া বলা হত তাঁকে। এবার সবই স্মৃতি হয়ে গেল।
Published by Samyajit Ghosh