ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা, মুম্বই, Unknown story of Lata Mangeshkar’s life লতা মঙ্গেশকর ভারতের সেই বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন যিনি তাঁর প্রতিভা, দক্ষতার দ্বারা মোহিত করেছিলেন গোটা বিশ্বকে। একই সঙ্গে তাঁর জীবনযাত্রা সবাইকে অবাক করেছিল। লতার গাওয়াকে অলৌকিক হিসাবে ব্যখ্যা করা হয়েছে। তাঁর গানে এমন আকর্ষণ ছিল যা শতবর্ষে একবারই পাওয়া যায়। এই দক্ষতাই লতাকে সবচেয়ে আলাদা এবং বিশেষ করে তুলেছিল অন্যদের থেকে। বর্ষীয়ান এই শিল্পীর জীবনের এমন কিছু গল্প, কথা রয়েছে যা অনেকের কাছেই অজানা। আজ সেই অজানা লতার গল্পই জানাব আপনাদের।
লতা নয়, নাম ছিল হেমা Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
লতা মঙ্গেশকরের আসল নাম ছিল হেমা। পরবর্তীকালে তাঁর বাবা দীননাথ মঙ্গেশকরের ‘ভাওবন্ধন’ নাটকের লতিকা চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাম রেখেছিলেন লতা ।
বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
লতা মঙ্গেশকরের জীবন ছিল সংগ্রামে ভরা। বর্ষীয়ান এই শিল্পীর শৈশব কেটেছে বঞ্চনার মধ্যে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান লতা মঙ্গেশকর। বাবার মৃত্যুর পর পুরো পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে লতার উপর। ৩ বোন ও ভাইয়ের দ্বায়িত্ব নিয়ে বিধবা মায়ের পাশে দাঁড়ান লতা। সেই সময় থেকেই গানকে তিনি জীবিকার একমাত্র মাধ্যম বানিয়েছেন।
মারাঠি সিনেমার জন্য গাওয়া প্রথম গান Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
মাত্র ৫ বছর বয়স থেকেই গান গাওয়া শুরু করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। ১৯৪২ সালে বাবাকে হারানোর পরে, সংসারের অর্থ কষ্ট মেটাতে এবং বিধবা মায়ের পাশে দাঁড়াতে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই গানকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। একই সঙ্গে অর্থের প্রয়োজনেই প্রায় ছ’বছর পেশাদার অভিনয় জীবনে আটটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে গানকে পেশা করতে চেয়েছিলেন তিনি। ১৯৪২ সালে মরাঠি সিনেমা ‘কিটি হাসাল’-এর জন্য স্টুডিওতে গান রেকর্ডিং করেন লতা। কোনও অজ্ঞাত কারণে সিনেমাটি রিলিজ হলেও গানটি বাদ গিয়েছিল। কিন্তু তাতে ভেঙে পড়েননি তিনি। বরং আরও বেশি বেশি করে গান করতে থাকেন মারাঠি সিনেমার জন্য। তাঁর হার না মানা জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হন মারাঠি সিনেমা নির্মাতারা। মারাঠি সিনেমায় জায়গা করে নেন তাঁর গান।
চা বিস্কুট খেয়েই কাটত দিন Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
সারাদিন শুধু চা বিস্কুট খেয়েই কাটিয়ে দিতেন। তাঁর জীবন সংগ্রামের কাহিনী হার মানাবে যে কোনো চিত্রনাট্যকে। সঙ্গীত উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন লতা সহ তাঁর চার ভাই-বোন। মঙ্গেশকর পরিবারের সকলেই কোনও না কোনও ভাবে শিল্পজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পন্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন ধ্রুপদী সঙ্গীত পিয়াসী। অভিনয়ের পাশাপাশি গায়ক হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। একবার তিনি এক ছাত্রকে একটি বিশেষ রাগ অনুশীলনের কথা বলেন। এদিকে ছাত্রটি অনুশীলন করছে। এর মধ্যেই ছোট্ট লতা তার ভুল ধরিয়ে দেয়। সেদিন বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর বুঝতে পারেন, তাঁর বড় মেয়ে গায়িকা হতে চলেছে। বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ছাড়াও লতা মঙ্গেশকর গানের তালিম নিয়েছিলেন আমানত খান, আমান আলী খানের মতো কিংবদন্তির কাছে।
প্রথম হিন্দি গানের মজার গল্প Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
লতা মঙ্গেশকরও জীবনের প্রথম দিকে অভিনয় করতেন। বাবার বন্ধু মাস্টার বিনায়কের ‘ফার্স্ট ম্যাঙ্গালোর’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এর পরেই লতা তাঁর প্রথম হিন্দি গান গাওয়ার সুযোগ পান। এই গানের নাম ছিল ‘মাতা এক সপুত কি’ ।এর পরেও লতার সংগ্রাম চলতে থাকে।
আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
লতার প্রতিভা প্রথম জানতে পেরেছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ মাস্টার গোলাম হায়দার। তিনি লতার কণ্ঠস্বর শুনেছিলেন। এবং তাঁকে বিভিন্ন শিল্পীর কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সময় লতা মঙ্গেশকর ছিলেন খুবই দুর্বল। কারণ আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় ঠিক ভাবে খাবার জুটতো না তাঁদের।
লতা যখন প্রত্যাখ্যাত Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
মাস্টার গোলাম হায়দার ও লতা সম্পর্কিত একটি উপাখ্যান খুবই জনপ্রিয় ছিল। চলচ্চিত্র নির্মাতা শশধর মালিক ‘শহীদ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছিলেন। যেখানে গোলাম হায়দার সঙ্গীত রচনা করছিলেন। কিন্তু যখন তিনি শশধরের কাছে লতার কণ্ঠ শুনেছিলেন, তখন তিনি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ হিসাবে তিনি বলেছিলেন, লতার কণ্ঠ খুবই পাতলা। পরে মাস্টার গুলাব এই কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিলেন। এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন লতাকে তিনি বিখ্যাত একজন গায়িকা করে তুলবেন।
প্রথম হিট গান Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
অবশেষে এলো সেই দিন। ১৯৮৪ সালে, ‘মজবুর’ ছবিতে মাস্টার গোলাম হায়দারের লেখা ‘দিল মেরা তোদা’ গানটি গেয়েছিলেন লতা। এর পরই বদলে যায় লতার ভাগ্য। ছবিটির পাশাপাশি এই ছবির গান ও সুর দুটিই হিট হয়। পরিচিতি লাভ করে লতার গান।
বাবা বেঁচে থাকলে গায়ক হতেন না Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
লতা মঙ্গেশকর একটি সাক্ষাত্কারে লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন, তাঁর বাবা দীনানাথ মঙ্গেশকর দীর্ঘদিন জানতেন না, যে লতা গান করেন। তিনি এও বলেছিলেন, ‘বাবা বেঁচে থাকলে আমি গায়িকা হতে পারতাম না।’কারণ তাঁর বাবা এসব পছন্দ করতেন না। এরজন্য বহুবার তিনি লতাকে তিরস্কারও করেছেন তাঁর মায়ের দ্বারা।
বিয়ে না করার পেছনের গল্প Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
লতা মঙ্গেশকরের বিয়ে সম্পর্কিত প্রশ্ন সবসময়ই উঠতে থাকে, যে কেন তিনি বিয়ে করেননি। এক সাক্ষাৎকারে বিয়ে না করার কারণ জানিয়েছিলেন লতা বলেছিলেন, খুব অল্প বয়সেই তাঁর ওপর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে। আমার অনেক কাজ ছিল। ভেবেছিলাম সব কিছু মিটমাট করে বিয়ে করে সংসার করব। কিন্তু তার আর হয়ে ওঠেনি। মজা করে বলেছিলেন, হয়ত বিয়ে, সংসার আমার ভাগ্যে নেই।
কিশোর কুমারের সঙ্গে গান গাইতে অস্বীকার করেন Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
লতা মঙ্গেশকর এবং কিশোর কুমারের জুটি অনেক হিট গান উপহার দিয়েছে। তাদের বন্ধুত্বের গল্পও বেশ বিখ্যাত। লতা মঙ্গেশকরের সাথে কিশোর কুমারের অনেক সম্পর্ক ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও, লতা একদিন কিশোর কুমারের সাথে গান গাইতে অস্বীকার করেন। এর পেছনের গল্পটা ছিল কিশোর যখনই আসতেন, লতাকে অনেক জোকস শোনাতেন, যা শুনে তিনি একটানা হেসে উঠতেন এবং কণ্ঠস্বর এলোমেলো হয়ে যেত। এই কারণে তিনি কিশোর কুমারের সঙ্গে গান গাইতে রাজি হতেন না।
মোহাম্মদ রফির সঙ্গে বিবাদ ছিল Unknown story of Lata Mangeshkar’s life
মহম্মদ রফির সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের বিবাদ ছিল প্রায় ৪ বছর। এই ৪ বছর তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। ফলে দু’জনে একে অপরের সঙ্গে গান গাইতে অস্বীকার করতেন যদিও দু’জন একসঙ্গে অনেক চিরসবুজ গান দিয়েছেন আমাদের। পরে জানা যায়, এই বিবাদের কারণ ছিল একটি গানের জন্য প্রাপ্ত রয়্যালটি। যা নিয়ে তাঁদের দু’জনের ভিন্ন মতামত ছিল। যদিও পরে দু’জনেই আবার কথা বলতে শুরু করেন এবং একসঙ্গে কাজও করেছিলেন।
আরও পড়ুন : Lata Mangeshkar Passes Away সুর সম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে ২ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
আরও পড়ুন : Legendary singer Lata Mangeshkar সাত দশকের কেরিয়ারে তিন প্রজন্মের শ্রোতাকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন লতা মঙ্গেশকর
Publish by Julekha Nasrin