কৌশিক দাস, কলকাতা, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা: Rampurhat Violence রামপুরহাট ‘হত্যাকাণ্ড’ নিয়ে উত্তাল হল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। ‘মুখ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে’ এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফ থেকেও কেন কোনও বিবৃতি আসেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি বিধায়করা। বিরোধীদের অভিযোগ, এই ধরনের ঘটনাই প্রমাণ করছে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কতটা হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য এতজনের মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেই দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন। সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের দাবি, ‘ওই এলাকায় বালি খাদান, কয়লা খাদানে লুটের টাকার ভাগ নিয়ে বচসা এবং তার জেরে এই গণহত্যা। এর দায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে। ভোটের দিন খুনোখুনি হল, বুথ দখল হল–– তৃণমূলের এমপি, এমএলএ, গুন্ডাদের এসব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ Rampurhat Violence
বিজেপির দাবি, ‘রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডের জবাব দিতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধূলিসাৎ।’ বিধানসভায় মঙ্গলবার বিষয়টির উত্থাপন করেন বিজেপির শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি রামপুরহাট ইস্যুতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু স্পিকার তাতে কোনওভাবেই কর্ণপাত করছিলেন না। এই ঘটনা নিয়ে শঙ্কর ঘোষ বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব দাবি করেন। কিন্তু সেটিও শুনতে দেখা যায়নি স্পিকারকে। এরপরই ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়করা।
বিধানসভার সামনে বসেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁদের বক্তব্য, সাম্প্রতিককালে বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘গণহত্যা’র ঘটনা এটি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কোনও বিবৃতি আসেনি। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফ থেকেও কেন কোনও বিবৃতি আসেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি বিধায়করা। এই ধরনের ঘটনাই প্রমাণ করছে, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কতটা হয়েছে। Rampurhat Violence
বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার কথায়, ‘জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজ্যের সাধারণ মানুষ যে সুরক্ষিত নন, তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গিয়েছে বীরভূমের রামপুরহাটের এই ঘটনায়। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। পুরুলিয়া-ঝালদার খুন, তারপর উপপ্রধানকে খুন, তারই প্রতিবাদে ওয়াক আউট। মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ করতে হবে।’
সোমবার রাতে রামপুরহাটে জাতীয় সড়কের পাশ থেকে উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ ওঠে। তারপরই মঙ্গলবার সকালে প্রকাশ্যে আসে আরও বিস্ফোরক ঘটনা। রামপুরহাটের বগটুইয়ে ১০ জনের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুড়িয়ে মারা হয়েছে তাঁদের। সোমবার রাতভর চলেছে তাণ্ডব। একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সোমবার রাতেই তিনটি দেহ উদ্ধার হয় বলে খবর। বাকি সাতটি উদ্ধার হয় মঙ্গলবার সকালে। ছোটো আঙারিয়ার পর রাজ্য রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দিয়েছে রামপুরহাটের এই বগটুই গ্রামের হত্যাকাণ্ড।
অন্যদিকে রামপুরহাটের হত্যাকাণ্ডর ঘটনা এবার পৌঁছে গেল কলকাতা হাইকোর্টেও। আগামীকালই এ নিয়ে মামলা দায়ের হচ্ছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বীরভূমের ঘটনাই প্রমাণ করছে, এই অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন বিজেপির আইনজীবীরা। হাইকোর্ট এই বিষয়টি নিয়ে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে। তবে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হবে কিনা, তার সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। Rampurhat Violence
আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, ‘গতকাল তৃণমূলের একজন উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুন করা হয়েছে। পরবর্তীকালে খবর পাওয়া যায়, সোমবার রাতে ১০টি বাড়ি শিকল আটকে দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, এখনও পর্যন্ত খবর, ১২ জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা এবং ২ জন শিশুও আছে। এটা পুরোপুরি পরিকল্পিত খুন। যদিও অনুব্রত মণ্ডল বলে দিয়েছেন, এটা শর্ট সার্কিট থেকে হয়েছে। কোনওরকম তদন্ত ছাড়াই তিনি এ কথা বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে মহামান্য প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বিচারপতি তাঁদের অনুমতি দিয়েছেন মামলা দায়ের করার। বুধবার এ বিষয়ে মামলা করবেন। যাতে সঠিক তদন্ত হয়, দোষীরা শাস্তি পায়।’
Rampurhat Violence
————
Published by Subhasish Mandal