কৌশিক দাস, কলকাতা, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা: Modi may skip Bengal Biz meet রাজ্যের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কথা দিয়েছিলেন আসার ব্যাপারে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা শোনা যাচ্ছে, তাতে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে হয়তো শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া কথা রাখতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কারণ আর অন্য কিছু নয়। তাঁর দল বিজেপির একাংশের আপত্তি। কারণ, এই মুহূর্তে রাজ্যের প্রতিটি জায়গায় শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিজেপি।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বাণিজ্য সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যোগ দিলে হয়তো অন্য বার্তা যেতে পারে নীচুতলার কর্মীদের কাছে। তাই অনেকটা এই আশঙ্কা থেকেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাই নাকি চাইছেন না, আগামী ২০ তারিখ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে কলকাতায় এসে যোগ দিক প্রধানমন্ত্রী। যদিও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এই ব্যাপারে কোনও কথাই বলা হয়নি। এমনকী নবান্ন সূত্রেও এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী আসবেন না, তা সরকারি ভাবে ঘোষণাও করা হয়নি।
শেষবার দিল্লি সফরে গিয়েই রাজ্যের বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীও এই ব্যাপারে তাঁর আসা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এমনকী কী ঘটল, যার জন্য মমতার আমন্ত্রণ হয়তো ফিরিয়ে দিতে হতে পারে মোদীকে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
তবে রাজনৈতিক মহলের একটি সূত্র দাবি করছে, বাংলায় বিধানসভা ভোটের পর থেকেই শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে আরও কোমড় বেধেছে বিরোধী বিজেপি। এরমধ্যে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একপ্রস্ত বিতর্কেও জড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমন আবহে, প্রধানমন্ত্রী বাংলার বাণিজ্য বৈঠকে যোগ দেবেন। এবং তাতে গেরুয়া শিবিরের নিচুতলার কর্মীদের মনে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। অথচ দেখতে গেলে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আগাগোডা়ই একটি সরকারি অনুষ্ঠান। আর এখানে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ নেতা হিসাবেই। অতীতেও এমন অনেক নজির আছে। শত বিরোধিতার পরেও তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণ রেখেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এমনকী, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী ২০ এপ্রিল কলকাতায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন শুরু হচ্ছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে দেশে এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনও বাণিজ্য সম্মেলনের আসর বসেনি। অন্য কোনও রাজ্যই সাহস পায়নি অতিমারী জনিত মন্দার মধ্যে শিল্প সম্মেলন করার উদ্যোগ নিতে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সাহস করে এগিয়ে এসেছেন। ফলে দেশের শিল্পমহলও এই সম্মেলন ঘিরে উৎসাহী হয়ে রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে দেশের প্রথমসারির অধিকাংশ শিল্পোদ্যোগী এই সম্মেলনে অংশ নেবেন। মুকেশ আম্বানি, গৌতম আদানি প্রমুখ শীর্ষস্তরের শিল্পপতিদের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আসা প্রায় নিশ্চিত। সম্মেলনে যোগ দেবেন একাধিক দেশের শিল্পসংস্থা ও শিল্পকর্তারাও। সম্মেলনকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে একাধিক দেশের রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে। এইরকম একটি শিল্প-বাণিজ্যের আসরে অংশ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে আগ্রহী ছিলেন না স্বয়ং মোদিও। অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য মোদি এখন ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে। এই পরিস্থিতিতে এমন একটি সম্মেলনে যোগ দিলে প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতির হাল ফেরানোর বার্তা দিতে সক্ষম হতেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের পরামর্শ।
Published by Samyajit Ghosh