Tuesday, September 17, 2024
HomeNationalModel School setting examples একাধিক জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত সরকারি বিদ্যালয়, প্রাচীরের...

Model School setting examples একাধিক জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত সরকারি বিদ্যালয়, প্রাচীরের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের

 

Model School setting examples একাধিক জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত সরকারি বিদ্যালয়, প্রাচীরের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের

 

অমিত সরকার, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা, কোচবিহার: কোচবিহার জেলার প্রান্ত অসম বাংলা সীমানা ঘেঁষা রামপুর ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম ছাট ভলকা। এই গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াতে ১৯৬৭ সনে প্রতিষ্ঠিত হয় ছাট ভলকা চতুর্থ পরিকল্পনা প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক শিক্ষার সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনেকের নিম্নমুখী ধারনা থাকলেও, এই বিদ্যালয়ে আসলে তাদের ধারণার পরিবর্তন ঘটবে।

শিক্ষণীয় ক্লাসরুম

প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ হয়ে যেতে হবে বিদ্যালয়টির বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পরিপাটি ও সাজসজ্জা দেখেই।মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিন্ত করার পাশাপাশি শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে রয়েছে, ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। যে কারণে কোচবিহার জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে মিলেছে স্বীকৃতি।

Model School setting examples একাধিক জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত সরকারি বিদ্যালয়, প্রাচীরের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বদলে যেতে থাকে বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও নিয়ম নীতি। এর নেপথ্যে রয়েছেন শিক্ষানুরাগী একজন মানুষের উপস্থিতি। তিনি ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক গৌতম সাহা। ২০১৭ সনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরেই, বিদ্যালয়টির আমূল পরিবর্তন ঘটতে থাকে বলেও জানান, গ্রামবাসীরা। বর্তমানে বিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০৯ জন। এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৪।  বিদ্যালয়টির সুনাম শুধু এলাকার নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গোটা জেলা জুড়ে। গৌতমবাবু আগে যে স্কুলে ছিলেন ওই বিদ্যালয়টি ২০১২ সালে  নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার পেয়েছে। ২০১৮ সালে বর্তমান ছাট ভালকা চতুর্থ পরিকল্পনা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কোচবিহার সর্বশিক্ষা মিশন থেকে পেয়েছে নির্মল বিদ্যালয় পুরোস্কার। পাশাপাশি  ২০১৯ সালে যামিনী রায় পুরস্কার ও জাতীয় পুরস্কার।

ইচ্ছা থাকলেই কি না করা যায়। কোচবিহারের জেলার ছোট্ট গ্রামে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দেখলে সরকারি স্কুল সম্বন্ধে ধারণা বদলে যাবে মানুষের। কয়েক বছর আগেও সাদাসিধে রং চটা একটি বিদ্যালয় গৃহে চলত পঠন পাঠন। বছর চারেক আগের সেই সাদাসিধে মলিন স্কুলটি যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে, অবিশ্বাস্য লাগে স্থানীয় গ্রামবাসীর কাছেও।

Model School setting examples শুনলে অবাক লাগে, বর্তমান স্কুল পরিচালনা করে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাই

শুনলে অবাক লাগে, বর্তমান স্কুল পরিচালনা করে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাই। তার জন্য রয়েছে শিশু সংসদ ।এই সংসদে রয়েছে ৫ জন মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, শিক্ষা ও পরিবেশ মন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ক্রিয়া মন্ত্রী। পাঁচজন মন্ত্রীর তিনজনই মেয়ে। এই বিদ্যালয় মেয়েরাই সেরা। পড়াশোনা, খেলাধুলা এমনকি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডতেও পিছিয়ে নেই। বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য রয়েছে অভিযোগ বাক্স। এখানে যে কোন ধরনের অভিযোগ লিখে জমা দেওয়া যায়। বাড়ির কোন পরিবেশে যদি শিশুটি নিগৃহীত হয় সেটিও লিখে জমা দিতে পারে এই অভিযোগ বাক্সে ।  প্রধান শিক্ষক ও গ্রাম শিক্ষা সমিতিকে নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করে দিতে সদা প্রস্তুত।

 

Model School setting examples  মহানুভবতার শিক্ষা দেওয়া হয় শিশুদের

বিদ্যালয় গৃহে প্রবেশ করেই সুসজ্জিত ঘরে আছে অভিভাবক আনন্দ পাঠাগার, শিশুদের জন্য অপেক্ষা কালে মায়েরা বিভিন্ন ধরনের শিশু বিষয়ক গল্পের বই, বিভিন্ন পত্রিকা, এবং খবরের কাগজ পড়ার সুযোগ পান এখানে। বাড়িতে গিয়ে মায়েরা সেগুলি শেখান সন্তানদের। স্কুলের এক প্রান্তে রয়েছে “” মহানুভবতার দেওয়াল। যেখানে লেখা রয়েছে “”অপচয় না করে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার” তার অর্থ হল স্কুলপড়ুয়াদের  জামাকাপড় পুরনো হয়ে গেলে বা ছোট হয়ে গেলে, তারা ওই দেওয়ালে টাঙানো হ্যাঙ্গারে রেখে যায় পুরনো ব্যাগ, জুতো, জামা কাপড়। আর যাদের প্রয়োজন তারা এগুলো নিতেও পারে। ভূপেন হাজারিকার সেই গানটি প্রাণে বেঁচে উঠলো “মানুষ মানুষের জন্য”” মনে হল পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটা স্কুল এমন মহানুভবতার দেয়াল থাকা প্রয়োজন অপচয় না করে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার শিশুরা ছোটবেলা থেকেই শিখে যাবে তাহলে।

অফিস কক্ষের দেওয়ালে আছে ফটো গ্যালারী। সারা বছর ধরে স্কুলের যত কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয় তার সমস্ত ছবি  টাঙানো থাকে ওই গ্যালারিতে। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালে রয়েছে শিশুদের দিয়ে আঁকা প্রয়াস, শিশুদের আঁকা ছবি গল্প কবিতা ও আবৃত্তি এই প্রয়াসে স্থান পায়। শ্রেণিকক্ষের গোটা দেওয়াল জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণীয় উপকরণ।

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে জল সংরক্ষণ

বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের নামকরণ হয়েছে মনীষীদের উপাধি দিয়ে। যেমন বিদ্যাসাগর কক্ষ, নেতাজি কক্ষ, স্বামী বিবেকানন্দ কক্ষ প্রভৃতি। বিদ্যালয়ে রয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুব্যবস্থা, যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে সাবান ও লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ। বিদ্যালয়ের ভিতরে রয়েছে আমার দোকান,  যেখানে খাতা-কলম সহ পড়াশুনার যাবতীয় জিনিস রয়েছে সেখানে। যাতে স্কুল চলাকালীন ছাত্র-ছাত্রীদের কোন রকম অসুবিধার সম্মুখিন  হতে না হয়।

 

স্কুলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলাধুলার সামগ্রী। রয়েছে “”জল ধরো জল ভরো প্রকল্প””, বৃষ্টির এক ফোঁটা জল নষ্ট হয় না এই স্কুলে । রিজার্ভার এর মাধ্যমে জল ধরে রাখা হয় এই বিদ্যালয়। স্কুলের দেওয়ালে রয়েছে ইমারজেন্সি প্রশাসনিক ফোন নাম্বার সহ, মিড ডে মিলের তালিকাও।

এছাড়াও স্কুলটির রান্নাঘরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় সকলেই। এই বিদ্যালয়ে, রাঁধুনিদের রয়েছে ড্রেস।  পেঁপে ,কাঁচা কলা ,বেগুন, কাঁচা লঙ্কা সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়। মিড ডে মিলের রান্নার জন্য, রঙিন ভাবে স্কুলের মাঠে ছরিয়ে রয়েছে কেঁচো ও জৈব সার তৈরীর ব্যবস্থাও।

এরকম একটি স্কুল পেয়ে খুশি ছাত্র -ছাত্রী থেকে শুরু করে গ্রামবাসীরাও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম সাহা বলেন, স্কুলের প্রাচীর থাকলে স্কুলের পরিকাঠামোর দিক দিয়ে আমূল পরিবর্তন করতে পারতেন তিনি।

 

 

Published by Samyajit Ghosh

SHARE
RELATED ARTICLES
Html code here! Replace this with any non empty raw html code and that's it

Most Popular