শুভাশিস মণ্ডল, কলকাতা, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা : Legendary singer Lata Mangeshkar যাঁর কণ্ঠে ভারতীয় চলচ্চিত্রে মোট এক হাজারের বেশি গান সেই লতা মঙ্গেশকরের বাবা চাইতেন মেয়ে ধ্রুপদী সঙ্গীত নিয়েই চর্চা করতে। বাড়িতে কে এল সায়গলের গান ছাড়া অন্য গান গাওয়া নিষেধ। পরে সে বাধা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী। মোট ৩৬টি ভারতীয় ভাষায় গান করেছেন তিনি এবং গেয়েছেন বেশকিছু বিদেশি গানও।
১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান লতা মঙ্গেশকর Legendary singer Lata Mangeshkar
দীননাথ মঙ্গেশকর এবং শিবন্তী মঙ্গেশকরের সন্তান লতার জন্ম ১৯২৮-এর ২৮ সেপ্টেস্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে। মরাঠি ও কোঙ্কিণী সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর। পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করতেন। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে তিন বোন ও এক ভাইকে নিয়ে লতার শৈশব কেটেছে খুবই কষ্টে। ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান লতা মঙ্গেশকর। ভাইবোনেদের নাম আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর, মীনা মঙ্গেশকর এবং হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে লতা মঙ্গেশকর ছিলেন সবচেয়ে বড়। ছোটবেলায় বাড়িতে কে এল সায়গল ছাড়া আর কোনও গান গাওয়ার অনুমতি ছিল না। মাত্র ১৩ বছর বয়সে অর্থের তাগিদেই অভিনেত্রী হিসাবে কাজ করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। ছোটবেলা থেকেই জীবনযুদ্ধ। সেইসময় বাবাকে হারান গায়িকা। পাঁচ ভাই-বোনের কথা ভেবে ওই বয়সেই হাল ধরেন সংসারের। পরে মেকআপ আলো লোকজন গ্ল্যামার ভাল না লাগায় ফের ফিরে আসা সঙ্গীতজগতে।
১৯৪২ সালে প্রথম গান রেকর্ড মরাঠি ছবি ‘কিতি হসাল’-এ Legendary singer Lata Mangeshkar
প্রথম গান রেকর্ড ১৯৪২ সালে। গান গাইলেন মরাঠি ছবি ‘কিতি হসাল’-এ। এরপর ১৯৪৫-এ বোম্বেতে এসে ধ্রুপদী গানের তালিম শুরু করেন ওস্তাদ আমান আলি খানের কাছে। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিমের মাঝেই লতার সঙ্গে শশধর মুখোপাধ্যায়ের পরিচয় করিয়ে দেন মিউজিক ডিরেক্টর গুলাম হায়দার। লতার গলা শুনে প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায় ‘শহিদ’ ছবিতে গান গাওয়াতে রাজি হননি। বলেছিলেন ‘বড্ড সরু গলা’। এরপর গুলাম হায়দারের ‘মজবুর’ ছবিতে ১৯৪৮-এ ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহিন কা না ছোড়া’ গানটি গাইলেন লতা মঙ্গেশকর। শিল্পীর কথায়, ‘গুলাম হায়দার আমার গডফাদার’। ১৯৪৯-এ গাইলেন ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গানটি। ব্যাস, সেখান থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি লতা মঙ্গেশকরকে।
১৯৬০-এর দশকে হয়ে উঠেছিলেন প্লেব্যাকের রানি Legendary singer Lata Mangeshkar
৫ ফুট ১ ইঞ্চির লতা মঙ্গেশকর তাঁর সাত দশকের কেরিয়ারে তিনটি প্রজন্মের শ্রোতাকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। এমন উচ্চতায় লতা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যে, শত বৎসর পরেও হয়তো এই উপ মহাদেশের কোনও প্রান্তে কাউকে না কাউকে গেয়ে উঠতে হবে লতার গানের কলি। এখানেই সময়কে অতিক্রম করে লতা মঙ্গেশকর অনন্য। কাজ করেছেন অনিল বিশ্বাস, এসডি বর্মন, শংকর জয়কিশান, নওশাদ, হেমন্ত কুমার, সলিল চৌধুরী, ভূপেন হাজারিকার মতো সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে। ১৯৫০-এর দশকে তাঁর কণ্ঠে একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। তখন প্রায় সব সিনেমায় প্লেব্যাক কণ্ঠ লতা মঙ্গেশকরের। ১৯৬০-এর দশকে হয়ে উঠেছিলেন প্লেব্যাকের রানি।
পেয়েছেন একাধিক সম্মান Legendary singer Lata Mangeshkar
ভারতীয় সঙ্গীতে অন্যন্য স্বীকৃতির জন্য ১৯৮৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান লতা মঙ্গেশকর। ১৯৬৯ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৯৯ সালে পান পদ্মবিভূষণ। ২০০১ সালে পান দেশের সর্বোচ্চ অসমারিক নাগরিক সম্মান ভারতরত্ন। এছাড়াও জাতীয় পুরস্কার পান ১৯৭২, ১৯৭৫ এবং ১৯৯০ সালে এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান ১৯৫৮, ১৯৮২, ১৯৬৫, ১৯৬৯, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪ সালে। ২০০৭ সালে অফিসার অফ দি লেজিয়ান অফ অনার দিয়ে লতা মঙ্গেশকরকে সম্মানিত করে ফ্রান্স সরকার।
একনজরে লতা মঙ্গেশকরের স্বীকৃতি Legendary singer Lata Mangeshkar
- ১৯৬৯ – পদ্মভূষণ।
- ১৯৭৪ – বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক গান গাওয়ার জন্য গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড।
- ১৯৮৯ – দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার।
- ১৯৯৩ – ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার।
- ১৯৯৬ – স্টার স্ক্রিন লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।
- ১৯৯৭ – রাজীব গান্ধি পুরস্কার।
- ১৯৯৯ – এনটিআর পুরস্কার।
- ১৯৯৯ – পদ্মবিভূষণ।
- ১৯৯৯ – লাইফটাইম জি সিনে পুরস্কার।
- ২০০০ – লন্ডনে আইফার দেওয়া লাইফটাই পুরস্কার।
- ২০০১ – হিরো হোন্ডা এবং স্টারডাস্ট ম্যাগাজিনের সহস্রাব্দে সেরা মহিলা প্লেব্যাক গায়ক।
- ২০০১ – দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন।
- ২০০১ – নূরজাহান পুরস্কার।
- ২০০১ – মহারাষ্ট্র রত্ন।