নীলিমা সারগোধা, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা,Home Remedies for Ankle Pain : পায়ের চিন্তা মাথায় নেওয়ার কথা আমরা কেউ ভাবি না। অথচ, সে বেচারার ওপর দিয়েই যত ধকল যায়।একবার নিজেই ভেবে দেখুন না, সারা শরীরের ভারটা ধরে রেখে যে আপনাকে হাঁটাচ্ছে বা ছোটাচ্ছে, সে বেচারার ধকলটা কোথায়। যার পরিণতি গোড়ালিতে ব্যথা। আসলে মানুষের পায়ের ২৬টি হাড়ের মধ্যে গোড়ালির হাড় সবচেয়ে বড়৷ যা শরীরের ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে।পাশাপাশি, হাঁটা-দৌড়নোর সময় পায়ের উপর যে চাপ পড়ে, সেই চাপের বেশিরভাগটাই বহন করে গোড়ালির হাড়৷ বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাঁটার সময় পায়ের উপর শরীরের ওজনের ১.২৫ গুণ চাপ পড়ে৷ দৌড়ানোর সময় চাপ পড়ে ২.৭৫ গুণ৷ যার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গোড়ালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একটা সময়ের পর শুরু হয় ব্যথা৷
গোড়ালি ব্যথা একটি খুব সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এই ব্যথা যেকোনো ঋতুতেই বিরক্ত করতে পারে। কিন্তু শীতকালে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এই ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। যার মধ্যে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা, হিল পরে খুব বেশি হাঁটা, পায়ের গোড়ালি ফাটা এবং শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব। গোড়ালির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ নানা ধরনের ব্যথার ওষুধ খেতে থাকেন। তবে তারা অল্প সময়ের জন্য ব্যথা থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু এই শীতের মরশুমে যদি আপনি এই জিনিসগুলি ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি অনেকাংশে গোড়ালির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
গোড়ালির ব্যথা থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়,Home Remedies for Ankle Pain
১. আদা খাওয়া
গোড়ালিতে ব্যথার সমস্যা দূর করতে আপনার খাদ্যতালিকায় আদা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। আদা জলে মধু মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার পান করলে গোড়ালির ব্যথা থেকে অনেকাংশে উপশম পাওয়া যায়।
২. হলুদ খাওয়া
গোড়ালির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলুদের সাহায্যও নিতে পারেন। হলুদ জলে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করলে গোড়ালির ব্যথা দূর হয়। আপনি চাইলে দুধে হলুদ মিশিয়েও খেতে পারেন।
৩. মাছ খাওয়া
খাদ্যে মাছ অন্তর্ভুক্ত করে গোড়ালির ব্যথা ও ফোলাও কমানো যায়। আসলে মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ব্যথা এবং প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি এটি হাড়কে শক্তিশালী করতেও কাজ করতে পারে।
৪. আপেল সিডার ভিনেগার
যদি আপনার পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা এবং ফোলা সমস্যা থাকে, তবে আপেল সিডার ভিনেগার আপনাকে এতে সাহায্য করতে পারে। এর জন্য, আপনি কিছু জল গরম করুন, তারপরে কয়েক ফোঁটা আপেল সাইডার ভিনেগার যোগ করুন এবং মেশান। এবার এটি আপনার পায়ে লাগান। এতে করে আপনি অনেক স্বস্তি পাবেন।
৫. রক সল্ট ব্যবহার করা
গোড়ালির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপনি খাবারে শিলা লবণও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এর পাশাপাশি আপনি চাইলে হালকা গরম জলে শিলা লবণ মিশিয়েও কিছুক্ষণ এই জলে পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন।
৬. লবঙ্গ তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন
গোড়ালির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আক্রান্ত স্থানে লবঙ্গ তেল মালিশ করুন। এতে করে আপনার রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় এবং পেশী শিথিল হয়। পায়ে কোনো ধরনের ব্যথা হলে লবঙ্গ তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে আপনি সুবিধা পাবেন।
৭. বরফ প্রয়োগ করুন
গোড়ালিতে ব্যথার সমস্যা দূর করতে দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার আক্রান্ত স্থানে বরফ দিয়ে কম্প্রেস করুন। এ জন্য এক টুকরো বরফ একটি কাপড়ে মুড়ে ব্যথাযুক্ত স্থানে হালকা হাতে কম্প্রেস করুন। এতে করে আপনি স্বস্তি পাবেন।
৮. বাঁধাকপির পাতা
প্রদাহরোধকারী উপাদানযুক্ত বলে পরিচিত বাঁধাকপির পাতা আক্রান্ত গোড়ালিতে বেঁধে রেখেও ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ব্যবহারের আগে পাতাটিকে সামান্য গরম করে নরম করে নিয়ে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে তা পরিবর্তন করে নতুন পাতা লাগাতে হবে।
৯. বেকিং সোডা
বেইকিং সোডায় কয়েক ফোঁটা জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে মাখিয়ে রেখে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আক্রান্ত স্থানে পেস্ট মাখানোর পর এক টুকরা পরিষ্কার ব্যান্ডেজের কাপড় তার উপর বসিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
১০. নারিকেল তেল
আক্রান্ত স্থানে নারিকেল তেল সামান্য গরম করে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। গোড়ালিতে জমে থাকা বাড়তি ক্যালসিয়াম গলিয়ে ফেলতে সাহায্য করে এই তেল। পাশাপাশি ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
১১. তিসির তেল
গোড়ালির হাড় বেড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত এই তেল ব্যবহা করা যেতে পারে। এক টুকরা ব্যান্ডেজের কাপড় বা সাধারণ কাপড় তিসির তেলে ডুবিয়ে আক্রান্ত স্থানে তোয়ালে বা প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
১২. গোলাপ জল
গোলাপগুলি প্রদাহ হ্রাস করতে পারে। গোলাপের পাপড়িগুলিতে অ্যান্টিসেপটিক ভোলাটাইল তেল এবং ট্যানিনস নামক অ্যাস্ট্রিনঞ্জেন্ট থাকে, যা ফোলাভাব হ্রাস করে। গোলাপের একটি সংমিশ্রণ প্রস্তুত করুন এবং স্বস্তি পেতে আপনার ব্যাথার জায়গাতে লাগান।
আরোও পড়ুন : হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো সমস্যা দূরে থাকবে, ডায়েটে রাখুন শাক সবজি