ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা, কলকাতা, Benefits of mint for health and hair পুদিনা একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ।পুদিনার মূল থেকে শুরু করে ফুল পর্যন্ত – সবই ব্যবহারযোগ্য। প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে পুদিনা। তাই খাদ্য হিসেবে পুদিনা আপাতত অবহেলিত হলেও ওষুধ হিসেবে অবহেলিত নয় মোটেও।বরং যত দিন যাচ্ছে তত গবেষণা হচ্ছে পুদিনা ও পুদিনার মতো ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে, আর ততই মানুষ জানছে এসবের গুণ সম্পর্কে। আর তাই ব্যবহারের আগ্রহও তৈরি হচ্ছে নানা ভেষজ সম্পর্কে।শুধু খাবার আর ওষুধ হিসেবে নয়, রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও পুদিনার রয়েছে যথেষ্ট অবদান। পুদিনাপাতা ত্বক, চুল ও শরীর—তিনটির জন্যই খুব উপকারী। যেকোনো পরিচর্যার জন্য কয়েকটি পাতাই যথেষ্ট। কারণ, অতিরিক্ত ব্যবহারে বরং হতে পারে ক্ষতি। তাই সঠিক পরিমাণ ও ত্বকের ধরন বুঝেই ব্যবহার করতে হবে পুদিনাপাতা।
পুদিনা পাতার উপকারিতা Benefits of mint for health and hair
উকুন তাড়াতে
পুদিনার শিকড়ের রস উকুন তাড়াতে খুবই কার্যকর। পুদিনাপাতা বা শিকড়ের রস চুলের গোড়ায় লাগিয়ে একটি পাতলা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখতে হবে। এক ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইবার করলে এক মাসের মধ্যেই চুল উকুনমুক্ত হবে।
ব্রণের ওষুধ পুদিনা
খুব দ্রুত ব্রণ দূর করতে পুদিনাপাতা দারুণ কাজ করে। ১০ থেকে ১২টি পুদিনাপাতা ছেঁচে এক টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এটি ব্রণ, ব্রণ আক্রান্ত স্থান বা ব্রণের দাগের ওপর লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে তা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এটা ব্যবহার করা যাবে।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য পুদিনা
দুই টেবিল-চামচ চটকানো কলা এবং ১০ থেকে ১২টি পুদিনাপাতার পেস্ট মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এই প্যাক সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে পারেন। কলায় ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই থাকে প্রচুর পরিমাণে। এ ছাড়া রয়েছে পটাশিয়াম, ল্যাকটিক, অ্যামাইনো অ্যাসিড ও জিংক। এই তিনটি উপাদানে ত্বক হয় আর্দ্র ও মসৃণ।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে পুদিনা
ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমাতে ১০-১২টি পুদিনাপাতা বেটে তার সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে এক টেবিল-চামচ মুলতানি মাটি, আধা টেবিল-চামচ মধু ও আধা টেবিল-চামচ টক দই। ঘন মিশ্রণ হওয়া পর্যন্ত মেশাতে থাকুন। ঘরেও তৈরি করে নিতে পারেন টক দই। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুবার এটা ব্যবহার করলে ত্বকের তেলতেলে ভাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য পুদিনা
শুষ্ক ত্বকের জন্য ১০ থেকে ১২টি পুদিনাপাতা বেটে তার সঙ্গে ২ টেবিল-চামচ টক দই ও এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে ঘন পেস্ট করতে হবে। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক মসৃণ, আর্দ্র ও কোমল রাখতে এই ফেস প্যাক খুবই কার্যকর।
ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো করে
পুদিনা পাতার প্রদাহনিরোধক এবং অ্যান্টি–ব্যাকটিরিয়াল গুণাগুণ রয়েছে যা ব্রণ, পিম্পল সারাতে কাজে লাগে । পুদিনা পাতায় প্রচুর পরিমাণে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আছে, যা ব্রণ দূর করে । তাছাড়া এটি ত্বক পরিস্কার করতেও ভাল কাজে আসে । পুদিনার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণও রয়েছে যা শরীর থেকে ফ্রি র্যা ডিক্যাল দূর করে ত্বককে পরিষ্কার এবং তরুণ বানাতে সাহায্য করে । আর যেভাবে পুদিনা পাতা ত্বককে স্বাস্থ্যবান করে তোলে , তা হল এটি ত্বকের আর্দ্রতা দরে রাখে, মরা কোষ পরিষ্কার করে দেয় এবং ত্বক থেকে ময়লাও দূর করে দেয় । ফলে ত্বক টোনড এবং উজ্জ্বল লাগে ।
অবসাদ ও ডিপ্রেশন দূর করে
এই পুদিনার গন্ধ অসাধারণ প্রাকৃতিক উত্তেজক হিসেবে কাজ করে থাকে। আপনি যদি রোজকার জীবনে টেনশন এবং চাপ সহ্য করতে করতে ডিপ্রেসড ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লেন তখন আপনাকে পুদিনার তেলের সামান্য গন্ধই চাঙ্গা করে তুলতে পারে আপনাকে। এই পুদিনার তেলের গন্ধ আমাদের মস্তিস্ক থেকে অল্প পরিমানে সেরোটোনিনের নিঃসরণ ঘটাতে পারে। এর ফলে ডিপ্রেশন খানিক হলেও পরে দূর হয় যায়।
আরও পড়ুন : How To Quit Smoking খুব সহজেই ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে
এক গবেষণায় জানা গেছে পুদিনা পাতা আমাদের সচেতনতা ও স্মৃতিশক্তির ধারণক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। তবে যে সমস্ত মানুষ নিয়মিত পুদিনা যুক্ত চুইংগাম খায়। তাঁদের স্মৃতিশক্তি ও সচেতনতা সাধারণ মানুষদের থেকে বেশ খানিকটা বেশী হয়ে থাকে।
ক্যান্সার নিরাময় করতে
এই পুদিনা পাতায় থাকা ফাইটো-কেমিক্যাল বিভিন্নরকম ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে কিনা তা নিয়ে বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করছেন নানা ধরনের। তাই এই বিভিন্ন পশুর ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে পুদিনায় থাকা পেরিলিল অ্যালকোহল নামক ফাইটো-নিউট্রিয়েন্ট ত্বকের ক্যান্সার এবং কোলনের ক্যান্সার এমনকি ফুসফুসের ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু মানবদেহে ক্যান্সার ঠেকাতেও পুদিনা সমান ভূমিকা নেবে কিনা। তবে তা নিয়ে এখনও অনেক বিস্তৃত গবেষণার অবকাশ রয়েছে।
___
Published by Julekha Nasrin