সাম্যজিৎ ঘোষ, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা : Britain targets Chelsea club’s Russian owner on Ukraine crisis চেলসির রাশিয়ান মালিক রোমান আব্রামোভিচকে ব্রিটেনে বসবাস করা থেকে কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে চেলসি ফুটবল ক্লাবের কোটিপতি মালিককে লন্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিম বাড়ি, স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে কয়েক মাস ধরে দেখা যায়নি। এবার ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণের পাল্টা হিসেবে চেলসি ফুটবল ক্লাবের রাশিয়ান মালিক রোমান আব্রামোভিচকে নিশানা করল ব্রিটেনে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের আগ্রাসন বন্ধ না হলে আব্রামোভিচের লন্ডনে বসবাস করা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে।
ইংল্যান্ডের দৈনিক দ্য সান-এর মতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিরাপত্তা সূত্র এখন বলেছে যে ৫৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকে আবার ব্রিটেনে থাকতে দেওয়া হবে এমন সম্ভাবনা নেই।
দেশের অভিবাসন কর্মকর্তারা, আব্রামোভিচ – (যিনি কেনসিংটন প্যালেসের কাছে ১২৫ মিলিয়ন পাউন্ডের ম্যানশনের মালিক) – যুক্তরাজ্যে আর বসবাস করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বিশেষ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এই মামলা হোম অফিসের ‘স্পেশাল কেস ইউনিট’ এর অধীনে এখন চলে গেছে বলে জানা গেছে।
Britain targets Chelsea club’s Russian owner on Ukraine crisis
মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পরিচালিত ‘ক্লেপ্টোক্রেসির’ ‘মূল সহায়তাকারী’ হিসেবে রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি, আব্রামোভিচকেও ৩৫ জন-কে অলিগার্চের (গোষ্ঠী শাসক) একজন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
রোমান আব্রামোভিচ অবশ্য এই অভিযোগকে কঠোরভাবে অস্বীকার করেছেন, যে তিনি ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ বা এমন কিছু করেছেন যা তার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণ হবে। এর কারণ ব্রিটেন ইউক্রেনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চেয়েছিল।
পুতিন যোগ, চেলসি ক্লাবের রুশ মালিককে নিষিদ্ধ করল ব্রিটেন
২০১৮ সালে আব্রামোভিচ ইসরায়েলি নাগরিকত্ব নিয়ে, ছয় মাস পর্যন্ত ব্রিটেনে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিলেন। গত অক্টোবরে লন্ডনে একটি সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের জন্য তার ইসরায়েলি পাসপোর্ট ব্যবহার করেছিলেন।
তবে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ঊর্ধ্বতন সূত্র দ্য সানকে জানিয়েছে যে আব্রামোভিচের স্থায়ী ভিসার জন্য আবেদন করার যে কোনও প্রচেষ্টা ‘ অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করা হবে’।
আব্রামোভিচের আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ ৮.৪ বিলিয়ন পাউন্ড। তাঁর বিশাল সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে, অনেক বিলাসবহুল প্রমোদতরী বা সুপার ইয়ট, তার মধ্যে একটি হল ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের সোলারিস যার একটি ক্ষেপণাস্ত্র সনাক্তকরণ ব্যবস্থা রয়েছে।
তবে আব্রামোভিচ কখনই ব্রিটেন যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রাখেননি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সময় রাষ্ট্র থেকে কেনা সরকারি সম্পদ বিক্রি করে তার বিপুল অর্থ উপার্জন করেন।
আব্রামোভিচ ২০০৩ সালে চেলসির মালিকানা নিয়ে নেন এবং কোচ হোসে মরিনহোর সাহায্যে দলকে প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম বৃহৎ ক্লাবে রূপান্তরিত করেন। চেলসি, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ সহ বহু ট্রফি জয় করে এই সময়ে। আব্রামোভিচের যুক্তরাজ্যের সম্পদের সিংহভাগ পাওয়া যাবে লন্ডনের স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত ইস্পাত ও খনির জগতে দৈত্য, ইভরাজ-এ।
Britain targets Chelsea club’s Russian owner on Ukraine crisis
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাস আব্রামোভিচকে নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু করা হবে কিনা তা বলতে অস্বীকার করেছেন, তবে জানিয়ে দিয়েছেন যে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত হবে।
“আমাদের কাছে রাশিয়ান নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে,” তিনি বলেছন।
“রাশিয়া যদি তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে, তাহলে আমরা আরও বেশি ব্যাঙ্ক, অভিজাত এবং তাৎপর্যপূর্ণ সংস্থাগুলিকে নিশানা করে চালিয়ে যেতে পারি।
“এটা পুতিনকে ব্যথা দেওয়ার এবং সময়ের সঙ্গে রাশিয়ান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অবনমিত করার বিষয়ে, পুতিনের ঘনিষ্ঠ লোকদের লক্ষ্য করে করা হবে। আমাদের যা করতে হবে তা যতটা সম্ভব ওদের জন্য বেদনাদায়ক করা।’
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গতকাল সিটির সিনিয়র ব্যক্তিদের সঙ্গে রাশিয়ান ব্যবসা এবং ক্রেমলিনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের উপর নজরদারি শক্ত করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হাউস অফ কমন্সকে বলেছিলেন যে সরকার নিষেধাজ্ঞার পরবর্তী পদক্ষেপগুলি ‘সামনে নিয়ে আসছে’ আর তাতে ‘সমস্ত রাশিয়ান ব্যাঙ্ক, সমস্ত অলিগার্চ, সমস্ত রাশিয়ান ব্যক্তি লন্ডনের বাজারে অর্থ সংগ্রহ করা বন্ধ করবে’।
মন্ত্রীরাও যুক্তরাজ্যের আর্থিক বাজারে ক্রেমলিনের ঋণ নেওয়া বন্ধ করার পরিকল্পনা তৈরি করছেন
টোরি এমপি বব সিলি বলেছেন, রাশিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা ‘নোংরা টাকার জোয়ার’ দেশটিকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ করছে।
সব মিলিয়ে পুতিন ঘনিষ্ঠদের লক্ষ্য করছে ব্রিটেন। এর মধ্যে ফুটবলও জড়িয়ে গেল। কারণ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও খ্যাতনামা ক্লাব চেলসির মালিক যে একজন রাশিয়ান।