সুরজিৎ দাস, নদিয়া, ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা: হলুই গান বা হোলবোল গান প্রথম শুরু করেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের কৃষ্ণপুরের অজিত ঘোষ। বাংলার লোকসমাজে হোলবোল একটি প্রাচীন লোকগান নামে পরিচিত। আগেকার দিনে রাখাল বালকেরা মাঠে গরু চরাতে যেত এবং তারই পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের গান বানাত ওই মাঠে বসেই। তারপর সন্ধ্যাবেলায় গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে গোয়ালে উঠিয়ে দিয়ে সেইসব রাখাল বালকেরা ও আশেপাশের লোকজন খোল-করতাল ও খঞ্জনি নিয়ে বেরিয়ে পড়ত বাড়ি-বাড়ি গান করতে। এই গানের মাধ্যমে প্রত্যেক বাড়ি থেকে চাল, ডাল, আলু, সবজি, তেল, লবণ, ইত্যাদি রান্না করার যাবতীয় জিনিস সংগ্রহ করত। এটি সাধারণত পুরো পৌষ মাস ধরেই করত তাঁরা। এই চাল, ডাল নিয়ে মাঘ মাসের প্রথম দিকে গ্রামের মাঠের মধ্যে বটগাছের নীচে গিয়ে সবাই মিলে বনভোজন করত এবং গ্রামের সমস্ত লোক সেখানে খাওয়া-দাওয়া করত। কিন্তু যুগের উন্নয়নের সাথে সাথে আজ যেন এই লোকসংস্কৃতিতে টান পড়েছে। এখন আর নতুন প্রজন্ম এই সব গানের দিকে আগ্রহ দেখায় না। ফলে অবুলপ্তির পথে হোলবোল গান। কৃষ্ণগঞ্জের কৃষ্ণপুর গ্রামের কিছু যুবক এই লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে চলেছে এখনও৷ প্রথা মেনে আজও অজিতবাবুর বাড়িতে গিয়ে প্রথম গান গেয়ে সূচনা করেন হোলবোল গানের।
পরম্পরা মেনে আজও কৃষ্ণগঞ্জে বেঁচে বাংলার লোকসংস্কৃতি হোলবোল গান Folk culture of Bengal
আরও পড়ুন : Bharat Ratan Lata Mangeshkar : চাপা কণ্ঠের কারণে লতা মঙ্গেশকরকে প্রথমে গান করার সুযোগ দেওয়া হয়নি
সময়ের কালক্রমে গানের ধরন কিছুটা হলেও বদলে গেছে। আগে যেমন গানের ধরন ছিল গ্রামের পরিবারের মন জয় করা। যেমন, ‘যে দেবে কাটা কাটা তার হবে সাত বেটা’, ‘যে দেবে মুঠো মুঠো তার হবে হাত ঠুটো’, ‘যে দেবে ফালি ফালি তার হবে হাত খালি’। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষ্ণকথা বা রাধাকথা যেমন আছে, তারসাথে রঙ্গভঙ্গ বিভিন্ন রাজনৈতিক কাজে ভোট প্রচারের উদ্দেশে এই ধরনের গান ব্যবহার। এ বছরও রাখাল বালকেরা দলবল নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গান উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি সমাজ সচেতন করার গানও তাঁদের গলায় শোনা গেল। এবারের গানের ধরনটা একটু আলাদা। এবারের গান হল করোনার গান। মহামারী করোনা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে রাখল বালকেরা। পাশাপাশি যেহেতু তাঁরা করোনাবিধিকে উপেক্ষা করতে পারবে না তাই তাঁদের লোকসংস্কৃতিকে বজায় রাখার জন্য কয়েকজন মিলে এই বনভোজন করছেন বলে জানিয়েছে শিল্পী নিত্যগোপাল ঘোষ| আধুনিক সমাজের বুকে মানুষ হাজার ব্যস্ততার মাঝেও কিছু মানুষ এখনও আছেন যাঁদের সেই পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির দিকে নজর দিয়ে তাকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ তাঁদের এহেন প্রয়াসকে কুর্নিশ জানিয়েছে মানুষজন। লোকসংস্কৃতিকে ভালোবাসে তার অতীত ইতিহাস চিনিয়ে দেওয়াটা রাখাল বালকদের চেষ্টা। এই প্রাপ্তি সমাজের বড় পাওনা বলে মনে করেন সমাজের বিশিষ্ট ব্যাক্তিরাও।
—–
Published by Subhasish Mandal