Late night dinner is harmful for human body রাতে দেরি করে খাবার খান ? নিজেই বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা, কলকাতা : ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সব খাবারের একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে।কিন্তু আজকের এই ব্যস্ততার দিনে কতজনই বা আর একেবারে ঘড়ি ধরে খাবার সময় পায়। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় নির্দিষ্ট সময়ের থেকে বেশ খানিকটা দেরিতেই আমাদের খাওয়া হয়। রাতে দেরি করে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটি দ্রুত ত্যাগ করা উচিত। অন্যথায় আপনি অসুস্থ হতে পারেন। বড় শহরের পাশাপাশি এখন ছোট শহর বা গ্রামেও গভীর রাতে খাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মাঝরাতেও এখন অনেকে হোটেলে খেতে বের হয়। এই প্রসঙ্গে আয়ুর্বেদিক ডাঃ ভারা লক্ষ্মী বলেন, গভীর রাতের খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো জানতে চাইলে আপনাকে কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
খাওয়ার সঠিক সময়
সবাই জানে রাত দশটার আগে খাবার খাওয়া উচিত। কিন্তু আয়ুর্বেদে খাবারের সঠিক সময় বলা হয়েছে সন্ধ্যা ৭টায়। এমন অনেক লোককেও দেখতে পাবেন যারা ৭-৮ টায় নয়, রাত ১১-১২টায় খায়। যার ফলে তাদের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে।
Late night dinner is harmful for human body গভীর রাতে খাওয়ার খেলে কি কি সমস্যা হয়
অ্যাসিডিটির সমস্যা
ডাঃ ভারা লক্ষ্মী জানান, গভীর রাতে খাওয়ার প্রথম সমস্যা হতে পারে অ্যাসিডিটি। আপনি যদি প্রতিদিন দেরিতে রাতের খাবার খান, তাহলে হৃদযন্ত্রের সমস্যাও হতে পারে। অনেক সময় পেট সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যাও হতে থাকে।
ওজন বৃদ্ধি
রাতে শরীরের বিপাক দিনের থেকে ধীর গতিতে হয়। যার কারণে গভীর রাতে খাবার হজম করতে অসুবিধা হয়। রাতে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালোরি বার্ন হতে পারে না। ফলাফলস্বরূপ ওজন বেড়ে যায়।
রক্তচাপের সমস্যা
গভীর রাতে খাবার খাওয়ার অভ্যাস রক্তচাপের পাশাপাশি রক্তে সুগারের মাত্রাও বাড়ায়, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আগে ভাগে রাতের খাবার সারুন।
ঘুমের সমস্যা
বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে ক্ষুধা লাগতে পারে। তখন হাতের কাছে যা পাওয়া যায় কিংবা মুখরোচক কিছু খেয়ে পেট ভরান অনেকে। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, গভীর রাতে স্ন্যাকস বা খাবার খেলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
বিরক্তি ভাব
বেশি রাতে খাচ্ছেন মানে রাতে ঘুমের রুটিন আপনি ঠিকভাবে মানছেন না। এর ফলে আপনার মেজাজ খিটখিটে হতে পারে। পর্যাপ্ত মাত্রায় ঘুম না হলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না, ফলে বিরক্তির সৃষ্টি হয়।
মানসিক সমস্যা
রাতে দেরিতে খেলে মানসিক চাপের হরমোন বাড়ে। এতে রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে যায়। এটি হৃৎপিণ্ডের কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয় এবং হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা রাতে দেরি করে খান, তাঁদের শরীরে ইনসুলিন ও লেপটিনের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে ক্ষতিকর চর্বি বেড়ে যায়। ফলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
রাতে দেরি করে খেলে হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে বিপাকের বিঘ্ন ঘটে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং নানা রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
Late night dinner is harmful for human body আপনার করণীয়
ভারী খাবার খাবেন না
এমন হাজার হাজার মানুষ আছে যারা রাতে খুব বেশি খাবার খায়। তারা ভারী খাবার গ্রহণ করে এই ভেবে যে খাওয়ার পর তাদের ঘুমাতে হবে। কিন্তু, আয়ুর্বেদ অনুসারে, গভীর রাতে ভারী খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এতে পেট খারাপ থেকে শুরু করে গ্যাস, ঘুমের সমস্যা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
দ্রুত খাওয়া এড়িয়ে চলুন
অনেক সময় দেরি হওয়ার কারণে মানুষ রাতে তাড়াতাড়ি খেতে শুরু করে। অনেকেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে খাবার খেয়ে বিছানায় শুতে যান। এমন পরিস্থিতিতে আপনারও যদি দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে এই অভ্যাস বদল করুন। খাবার খাওয়া এবং বিছানায় যাওয়ার মধ্যে অল্প হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ডায়েটে এই জিনিসগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন
আপনি গভীর রাতে খাচ্ছেন এবং ভাজা খাবার অতিরিক্ত খাচ্ছেন, তাহলে আপনি ভুল করছেন। ডাক্তার ভারা লক্ষ্মীর মতে, রাত ৮টার আগে আপনি মুগ ডাল, হালকা ভাত, ফল, রুটি এবং সবুজ শাকসবজি খাবারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
আঁশযুক্ত খাবার খান
রাতের খাবারে আঁশ-সমৃদ্ধ খাবার রাখা ভালো। গাজর, পেঁয়াজ, শসা, টমেটো দিয়ে সালাদ তৈরি করতে পারেন। খেতে পারেন ঢেঁড়স, মিষ্টি আলু ও বাদামি চালের ভাতও।
রাতের খাবার বাদ দেবেন না
রাতে খেতে হবে কম, কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাতের খাবার অবশ্যই খাওয়া উচিত। প্রতি রাতে খাবারে সবজির স্যুপ বা সালাদ, রুটি, ডাল, মাছ ও টকদই রাখুন। রাতে ফল খেতে চাইলে খাবার শেষের আধঘণ্টা পরে ফল খান।